হাতির হানায় আলিপুরদুয়ারে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু
দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩১ মে ২০২৫
হাতির হানায় আলিপুরদুয়ারে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হল। মৃতদের মধ্যে এক সদ্যোজাতও রয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কুঞ্জনগর বনাঞ্চল লাগোয়া সিংপাড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে এই ঘটনায় বন কর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে শনিবার সকাল থেকেই পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ‘মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত একটা নাগাদ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কুঞ্জনগর বনাঞ্চল লাগোয়া সিংপাড়ায় চলে আসে হাতির পাল। কমপক্ষে ৭টি হাতি ছিল। বনকর্মীরা হাতি তাড়াচ্ছিলেন। সেই সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন দাস পরিবারের সদস্যরা। হাতির সামনে পড়ে যান মনোজ দাস (৩২)। তাঁকে হাতি আছড়ে মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। মনোজের মা মাখনরানি দাস (৬৫) ৩৫ দিনের নাতনি মানসীকে কোলে ছেলেকে বাঁচাতে যান। বৃদ্ধাকে পিষে মারে হাতি। তাঁর কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা এলাকায়। চিৎকার শুনে পড়শিরা জড়ো হন। শনিবার সকালে বন দপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও বাঁশ ফেলে দফায় দফায় শুরু হয় পথ অবরোধ। অভিযোগ, ওই এলাকায় প্রায় প্রতি রাতে হাতির হামলা হলেও বন দপ্তরের কোনও হেলদোল নেই। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হাতির হানায় আলিপুরদুয়ারের রাজাভাতখাওয়া এলাকার এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। নিজের জমিতে চাষের কাজ তদারকি করার সময়ে তাঁর উপর হামলা চালায় হাতিটি।
বনকর্তাদের মতে, হাতির করিডর ক্রমশ দখল হয়ে যাচ্ছে। চলাচলের পথে বাধা পেয়ে হাতি মারমুখী হচ্ছে। সেই কারণেই মানুষ-হাতি সংঘর্ষ বাড়ছে। মালবাজার, মেটেলি, বানারহাট ও নাগরাকাটা, আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ও মাদারিহাট এবং শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, খড়িবাড়ি, ফাসিদেওয়া ব্লকের বাগডোগরা, বুড়াগঞ্জ, হাতিঘিসা, মণিরাম, কেটুগাবুরজোত, মতিধর, গিরিশচন্দ্র, মানঝা চা বাগান এলাকায় হাতির হানা বাড়ছে। হাতির হানা রুখতে বন দপ্তরের তরফে ফেন্সিং, রাতপাহারা সহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সপ্তাহখানেক আগেই জলপাইগুড়িতে হাতির হানার দু’জনের মৃত্যু হয়। রাজগঞ্জ ব্লকের মান্তাদারি গ্রাম পঞ্চায়েতের টাকিমারিতে বুনো হাতি শুড়ে তুলে আছড়ে মারে দুই যুবককে। মর্মান্তিক ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃতের পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। তার আগে ১৪ মে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে প্রাণ গিয়েছিল কেরল থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের।