• সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে মৃত ‘বড়বাবা’ সেজে প্রভাব খাটিয়ে জমি হাতানোর অভিযোগ
    বর্তমান | ০১ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: ৪৩ বছর আগে মারা গিয়েছে বড়বাবা। তাঁকে করে তোলা হয় ‘জীবিত’। তারপর প্রভাব খাটিয়ে শরিকি সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। পাত্রসায়রের ওই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। সম্প্রতি বিষয়টি জানতে পেরে জমির অন্যান্য শরিকরা জমি ফেরত এবং অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে জেলা পুলিসের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেই জমির মালিক সেজে তার স্ত্রীকে জমিটি বিক্রি করেছে। পুলিস জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত চলছে।

    যদিও অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার বিষয়টি জানতে পারার পর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি শুধু বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তারা আমাকে জমিটা বিক্রি করেছে। কিন্তু, বারবার বলা সত্ত্বেও ওরা জমিটা আমাকে রেজিস্ট্রি করেনি। নাম ভাঁড়িয়ে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে, গুটকার পিক ফেলতে ফেলতে তিনি সরে পড়েন।

    অভিযোগকারীরা বলেন, পাত্রসায়র থানার মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ কারক ১৯৮২ সালে মারা গিয়েছেন। তাঁর নামে বেলুট মৌজায় ১১০ শতক জমি রয়েছে। বর্তমানে রামকৃষ্ণবাবুর মোট ২৩ জন উত্তরাধিকারী রয়েছেন। কিন্তু, তাঁদের জায়গার ভাগ দিতে চায়নি ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁদের ফাঁকি দিতে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেই রামকৃষ্ণ কারক সেজে বসে। সে সই করে পুরো জমিটি তার স্ত্রীকে বিক্রি করে। সম্প্রতি ওই জমির দখল নিতে গেলে অন্যান্য শরিকরা বাধা দেন। তখন পুলিসের ভয় দেখিয়ে সে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে। এমনকী অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ থেকে শুরু করে প্রাণে মারার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ভূমিদপ্তরে ও রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে শরিকরা জানতে পারেন, ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট দলিলমূল্যে ৫৫ শতক করে দু’টি দলিল করা হয়েছে। তাতে বিক্রেতা হিসেবে রামকৃষ্ণ কারকের নাম রয়েছে। যিনি ৪৩ বছর আগে মারা গিয়েছেন। তবে ছবি রয়েছে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের। ক্রেতা হিসেবে সিভিক ভলান্টিয়ারের স্ত্রীর নাম রয়েছে। কিন্তু, সরকারি দপ্তরে অনলাইন সিস্টেম চালু থাকা সত্ত্বেও এটা কীভাবে সম্ভব হল, তা আমরা বুঝতে পারছিলাম না। পরে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সার্টিফায়েড কপি বের করলে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের কুকীর্তির ঘটনা জানতে পারি। অন্যান্য শরিকদের ফাঁকি দিতে সে নিজেই জমির মালিক সেজে সকলের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সেই জন্য জমি ফেরত এবং অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে জেলা পুলিস সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।    

    অভিযোগকারী বিশ্বনাথ কারক বলেন, পেশায় সে সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ায় পুলিসের ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। আমরা যাতে থানায় অভিযোগ জানাতে না পারি সেই চেষ্টাও করা হয়েছে। সেই জন্য আমরা জেলার পুলিস সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। আশা করি, পুলিস ব্যবস্থা নেবে। ডিস্ট্রিক্ট সাব রেজিস্ট্রার শুভঙ্কর পাল বলেন, কেউ জমি বিক্রি করতে চাইলে তাঁর আনুসঙ্গিক কাগজপত্র নেওয়া হয়। সেই কাগজপত্রে কেউ গণ্ডগোল করলে তা বোঝা খুব মুশকিল। পুলিস তদন্ত করলে আমাদের কাছে যদি কেউ নথি চায়, তা দিয়ে দেব। আমার কাছে এনিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি।
  • Link to this news (বর্তমান)