সোনার দোকানে কোটি টাকা তছরুপের ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত
বর্তমান | ০১ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: নবদ্বীপে সোনার দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তছরুপের অভিযোগে পুলিস পলাতক মূল অভিযুক্ত ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ১২মে নবদ্বীপের এক নামজাদা স্বর্ণ ব্যবসায়ী তাঁর দোকানে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে গত ২৯মে সকালে উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনে একটি ভাড়া বাড়ি থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতরা হল কৌশিক রায় ও তার বাবা বিমল রায়। শনিবার দুপুরে ধৃতদের কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন। কৌশিকের বাড়ি নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুর(সাউথ) প্যাক কোম্পানির মাঠ সংলগ্ন এলাকায়। সে ওই সোনার দোকানের ক্যাশিয়ার ছিল। পুলিস এর আগে কৌশিকের স্ত্রী ও বোনকে গ্রেপ্তার করেছিল। বর্তমানে ওই দুই অভিযুক্ত জেল হেফাজতে রয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে নবদ্বীপের জহরলাল নেহরু রোডে চারিচারা পাড়ার একটি সোনার দোকান থেকে প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। গত ১২ মে ওই দোকানের মালিক মৌমিতা দাস নবদ্বীপ থানায় ক্যাশিয়ার কৌশিক রায় সহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত কৌশিক বেপাত্তা ছিল। পুলিস প্রথমে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানা এলাকায় কৌশিকের শ্বশুরবাড়ি থেকে তার স্ত্রী ও বোনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে কৌশিকের সন্ধান পেতে চাইছিলেন তদন্তকারীরা। এরপর খবর পেয়ে গত ২৫মে বৃন্দাবনের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিস। সেখানকার পুলিসের সহযোগিতায় ২৯মে সকালে একটি ভাড়া বাড়ি থেকে মূল অভিযুক্ত ও তার বাবাকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। ওইদিনই তাদের মথুরা জেলা আদাললে তুলে ট্রানজিট রিমান্ডে নবদ্বীপ থানায় নিয়ে আসা হয়।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যাশিয়ার কৌশিক হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মালিকের নামে থাকা টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। পরবর্তীকালে সেই টাকা অভিযুক্ত নিজের স্ত্রী, বোন ও শ্বশুরের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। অভিযোগকারী জানান, গত ২১এপ্রিল তিনি তছরুপের বিষয়টি সফটওয়্যার কোম্পানির থেকে বিস্তারিতভাবে জানতে পারেন।
দোকানের মালিক বলেন, কেউ কোনও জিনিস নগদে কিনলে সেই বিলটা ও ডিলিট করে দিত। অ্যাডমিন পাসওয়ার্ডটাও হ্যাক করেছিল।
এমনকী, মাঝেমধ্যে আমরা দেখতাম দোকানের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রয়েছে। আমাদের কিউআর কোড স্ক্যানার সরিয়ে দেয়। তার পরিবর্তে ও নিজের স্ক্যানার রেখে টাকাটা ঢুকিয়ে নিয়েছে। অথচ বিল দেখিয়েছে আমাদের নামে। বিষয়টি জানতে পারার পর ও ফোনে আমাদের কাছে স্বীকার করে। কান্নাকাটি করে ও জানায়, সে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা নেয়নি। ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছে। পরের দিন ও ওর বাবাকে নিয়ে আসে। তখন সে জানায়, কাজ করে ধীরে ধীরে সব টাকা শোধ করে দেবে। কিন্তু, এরপরেই ওর ফোন বন্ধ পাই। কৌশিক এবং ওর বাবার হদিশ পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিসের ভূমিকায় আমরা ভীষণ খুশি। যেভাবে মূল অভিযুক্তকে বৃন্দাবন থেকে ধরে নিয়ে এল, এতটা সহযোগিতা পাব, আমরা ভাবিনি।