শেয়ার ট্রেডিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও যুবক
বর্তমান | ০১ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: থানার ওসি তার বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন। সেই কারণে এলাকায় তার দাপট ছিল। সেই প্রভাব কাজে লাগিয়ে ভূপতিনগর থানার আঙ্গারবেড়িয়া গ্রামের যুবক মহাদেব প্রধান শেয়ার ট্রেডিং করার নামে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ। ভূপতিনগর থানায় তার বিরুদ্ধে চারটি চেক বাউন্স মামলা দায়ের হয়েছে। প্রতিটি চেক বাউন্স মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে কাঁথি মহকুমা আদালত।
শেয়ার ট্রেডিং করে শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করে উধাও মহাদেব। ভূপতিনগর থানার আঙ্গারবেড়িয়া ছাড়াও উদবাদাল সংলগ্ন কিসমত পাটনা ও মুগবেড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় মহাদেবদের বাড়ি রয়েছে। মাধাখালিতে হোটেল বানিয়েছে। দীঘায় প্রচুর সম্পত্তি কিনেছে। তার শেয়ার ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করে অনেকেই টাকা পাননি। টাকার দাবিতে তাগাদা দিতেই আত্মগোপন করেছে। একসময় পুলিসের সঙ্গে দহরম মহরম ছিল। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও ওঠাবসা করত সে। তাকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছেন বহু মানুষ।
২০২৪সালে ৩১ডিসেম্বর মহাদেবের বিরুদ্ধে তিনটি চেক বাউন্স মামলা দায়ের হয়। এছাড়াও ওইবছর ২৯অক্টোবর নদীয়ার রানাঘাটে আরও একটি চেক বাউন্স মামলা দায়ের হয়। সবকটি কেসে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। টাকা ফেরত দেওয়ার নামে ভূতুড়ে চেক দিত। সেই চেক নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে লোকজন জানতে পারেন, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকাই নেই। মহাদেবের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করতে দক্ষিণ ২৪পরগনার কুলপি, ঢোলাহাট, নদীয়ার দেবগ্রাম থানা থেকে প্রতারিতরা ভূপতিনগর থানার দ্বারস্থ হয়েছেন।
ঢোলাহাট থানার দক্ষিণ গঙ্গাধরপুর গ্রামের শম্ভু হালদার বলেন, শেয়ার ট্রেডিংয়ের সূত্রে মহাদেবের সঙ্গে পরিচয় হয়। আকর্ষণীয় অফারের লোভ দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৪লক্ষ ৩১হাজার ৬০০টাকা নিয়েছে। আমাকে মাত্র ৩৮হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। এখনও ৩লক্ষ ৯৩হাজার টাকা বাকি। এই অবস্থায় আমার সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ করছে না। নদীয়ার দেবগ্রাম থানার তালপাড়া গ্রামের সুমন দাস চার লক্ষ টাকা দিয়ে প্রতারিত। এখন টাকা চাইতে গেলে হুমকি জুটছে বলে তাঁর অভিযোগ। অগত্যা ভূপতিনগর থানার দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। একইভাবে কুলপি থানার পাথরবেড়িয়া গ্রামের অমিত হালদার প্রতারিত হয়েছেন। তিনি বলেন, মহাদেব ভালো লাভের টোপ দিয়েছিল। সেই লোভে টাকা দিয়ে এখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পুলিসি পদক্ষেপের জন্য থানার দ্বারস্থ হয়েছি।
জানা গিয়েছে, ভূপতিনগর থানার পরপর দু’জন ওসি মহাদেব প্রধানের বাড়িতে ভাড়া থেকেছেন। যদিও প্রতারণার ঘটনা সামনে আসার পর থেকে তার বাড়ি ভাড়া নেওয়া বন্ধ করেছে পুলিস। অভিযুক্ত মহাদেব প্রধান ফোনে বলেন, আমার সঙ্গে অনেকে প্রতারণা করেছে। আমি নিজেও প্রতারণার শিকার। তাছাড়া ব্যবসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মোটা টাকা দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমি নিজে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছি। ভূপতিনগর থানার পুলিস জানিয়েছে, অভিযুক্ত মহাদেবের বিরুদ্ধে চারটি চেক বাউন্স মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় পরোয়ানা কার্যকর করা যায়নি। এছাড়াও শেয়ার মার্কেটিংয়ে প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে।