সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ষষ্ঠীতে জামাইয়ের পাত মাছ ছাড়া বেমানান। বিশেষ এই দিনে জামাইয়ের পাতে যে কোনও মাছ তো দেওয়া যায় না। কিন্তু, ষষ্ঠীর আগের দিনেই বাজারে মাছের দাম শুনে অবাক হলেন অনেকেই। অগত্যা অনেকেই মাছের দর কষাকষি করছেন। জামাইষষ্ঠী উপলক্ষ্যে রামপুরহাটে মাছের দাম বেশ চড়া ছিল। হরেকরকম মাছের আমদানি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। অন্ধ্রপ্রদেশের মাছে নিত্যদিন যে বাজার ভরে থাকে, এদিন সেখানেই দাপট দেখাতে হাজির হয়েছিল ইলিশ, পাবদা, ভেটকি, পমফ্রেট থেকে গলদা চিংড়ি। পিছিয়ে ছিল না রুই, কাতলার মতো দেশি মাছও। অন্যান্য দিনের তুলনায় তার দামও বেশ চড়াই ছিল।
বর্ষার আগেই বাজারে হাজির ইলিশ। কিন্তু, দাম তো কম নয়! এদিন রামপুরহাটের বাজারে ৬০০গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১০০০টাকা কেজি দরে। ১৪০০গ্রাম ওজনের ইলিশের দর ছিল ১৮০০-২০০০টাকা। পাবদা মাছ ৭০০ টাকা ও গলদা চিংড়ি, পমফ্রেট কেজিতে ৭৫০টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়ে গিয়েছিল দেশি কাতলা ও রুইমাছেরও। এদিন রামপুরহাটে দেশি কাতলা ও রুইয়ের দর ছিল কেজি প্রতি ৪০০টাকা। চালানি কাতলা ২৫০টাকা ও চালানি রুই ২৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে দাম বেশি হলেও জামাইয়ের পাত ভরাতে সাধ্যমতো কিনেছেন শ্বশুররা।
প্রতি বছরই জামাইষষ্ঠীর বাজারে মাছের চাহিদা বেশি থাকে। তাই প্রতিবারই দর কিছুটা চড়ে যায়। এবারেও একই ঘটনা ঘটেছে। মাছ ব্যবসায়ীদের কথায়, অনেকে চেনা ক্রেতাই মাছের দর শুনে রাগ দেখিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের কিছু করার ছিল না। রামপুরহাটের মাছ ব্যবসায়ী বাক্কার শেখ বলেন, জামাইষষ্ঠীর দিন এমনিতেই মাছের দর বাড়ে। আসলে চাহিদার তুলনায় জোগান কম।
এদিন মাছ বাজারে গিয়ে দাম শুনে বহু ক্রেতারই চোখ কপালে উঠেছে। দরাদরি করে মাছের দাম কমানোর চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের। কিন্তু মন গলেনি বিক্রেতাদের। রামপুরহাট শহরের বাসিন্দা প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জামাইয়ের পছন্দের মাছ ইলিশ। তবে দাম যে এতটা হবে, তা অনুমান করতে পারিনি। আর এক ক্রেতার আক্ষেপ, যে যা পারছে দর হাঁকছে। অন্যদিনের চেয়ে অনেকটাই দাম বেশি। জামাইষষ্ঠীর বাজারে দাম বাড়তে পারে। তা বলে এত দাম বাড়াবে বুঝতে পারিনি। অনেকেই এদিন বাজারে কেন টাস্কফোর্সের কর্মীদের দেখা মেলেনি তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। রামপুরহাটের গৃহিণী সুলগ্না দাস বলেন, জামাইষষ্ঠীর পাত মাছ ছাড়া বেমানান। তাই ষষ্ঠীর আগেরদিনই মাছ কিনতে বাজার গিয়েছিলাম। কিন্তু বাজারে গিয়ে মাছের দাম শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি।
শ্বশুররা সারাদিন গজগজ করলেও শাশুড়িরা কিন্তু হাসিমুখেই মাছের প্লেট জামাইয়ের দিকে এগিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। ফলের বাজারও ছিল অগ্নিমূল্য। এদিন আম কেজি প্রতি ৪০-৫০টাকা, লিচু ৩২০টাকা কেজি, আপেল ২৫০-৩০০ টাকা কেজি, শসা ৪০-৫০ টাকা কেজি ছিল। তবে ক্রেতাদের অনেকেই বলেন, জামাইষষ্ঠী তো বছরে একদিনই। যতই দাম বাড়ুক। জামাই অ্যাপায়নে কোনও খামতি রাখতে চাই না। -নিজস্ব চিত্র