নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: প্রচার চলাকালীন প্রার্থী আলিফা আহমেদের সামনেই দ্বন্দ্বে জড়াল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। স্থানীয় নেতৃত্বের উপর চড়াও হয়ে বিশৃঙ্খলা পাকানোর অভিযোগ ওঠে একাংশের বিরুদ্ধে। এর ফলে প্রচার প্রক্রিয়াই কিছুক্ষণের জন্য ভণ্ডুল হয়ে যায়। শনিবার বেলার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত হাতগাছা পঞ্চায়েত এলাকায়। ঘটনায় হাতগাছা পঞ্চায়েতের তৃণমূলের বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আলিফা বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস একটা বড় পরিবার। নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা কাটাকাটি হয়েছিল। প্রার্থীকে সবাই সব জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছেন। সব মিটমাট করে আমরা আবার ভোট প্রচার করেছি।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার কালীগঞ্জ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শক্তিশালী পঞ্চায়েত হাতগাছা থেকেই প্রচার শুরু হয়। হুডখোলা গাড়িতে চেপে বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ সারছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আলিফা আহমেদ। কোথাও মালা পরিয়ে, আবার কোথাও ফুল দিয়ে বরণ করা হচ্ছিল প্রার্থীকে। তাঁর সঙ্গে গাড়িতে সংগঠনের প্রথম সারির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দল ও সংস্থার তরফ থেকে একটি নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করা হয়েছিল। হাতগাছা পঞ্চায়েতের বসরখোলার কাছে প্রয়াত বিধায়ক গোষ্ঠীর স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অন্য রুটে প্রার্থীকে নিয়ে যান। তাই নিয়ে আপত্তি জানান স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি ও অন্য নেতারা। কারণ এর ফলে অন্যান্য জায়গায় জনসংযোগ করতে দেরি হয়ে যেত। তখন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও তাঁর লোকজন অঞ্চল সভাপতি হাফিজুল শেখের উপর চড়াও হন। প্রাথমিকভাবে দলীয় নেতারা সেই পরিস্থিতি সামাল দেন। তারপর প্রার্থীর গাড়ি আসাচিয়া পৌঁছতেই অঞ্চল সভাপতি ও স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং ওই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের দিকে তেড়ে আসেন। সেইসঙ্গে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তারপর আর ওই সদস্যের হদিশ পাওয়া যায়নি। গত লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ উঠেছিল।
এই ঘটনার কারণে আসাচিয়া এলাকাতেই প্রার্থীর প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এমনকী প্রয়াত বিধায়ক গোষ্ঠীর লোকজনের একটি চারচাকা গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী জখম হন। হাতগাছা পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি হাফিজুল শেখ বলেন, দলের নির্দেশ মতো ভোট প্রচারের নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণ করা ছিল। বিগত দিনে দলবিরোধী কাজ করা কিছু লোকজন বিশৃঙ্খলা পাকানোর চেষ্টা করেন। সেইসঙ্গে আমাদের উপর চড়াও হয়। যার জন্য আমাদের বেশ কয়েকজন জখম হয়েছে। ওরা এই পরিস্থিতিতে অশান্তি পাকিয়ে ভোট নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
বিকেলের দিকে অবশ্য ওই এলাকাতেই বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ সারেন তৃণমূল প্রার্থী। উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ বিধানসভায় জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্রের নেতৃত্বাধীন ব্লক সংগঠন এবং প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। গত লোকসভা নির্বাচনে ‘তরমুজ’ নেতাদের ভোট কাটার আশঙ্কার মধ্যেও হাতগাছা পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূল প্রায় ১২ হাজার ভোটে লিড পেয়েছিল। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, দলের একটি প্রোটোকল রয়েছে। সেইমতোই কাজ হবে।