• ভবানীপুরে অপহৃত সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তা, মুক্তিপণের সূত্র ধরে লোকেশন ট্র্যাক, উদ্ধার যাদবপুরে
    বর্তমান | ০১ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যদুবাবু বাজার। গিজগিজ করছে লোকজন। মোড়ের মাথায়, নেতাজি ভবন মেট্রো স্টেশনের গেটের কাছেই ফুটপাতে বন্ধুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্পে মত্ত মাঝবয়সি এক ব্যক্তি। আচমকা ফুটপাতের সামনে এসে দাঁড়াল একটি গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত রাস্তার ছবিটা যেন বদলে গেল সিনেমার দৃশ্যে! গাড়ি থেকে হুড়মুড় করে নেমে এল তিনজন। প্রত্যেকের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। কিছু বোঝার আগেই গলা ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তোলা হল ওই ব্যক্তিকে। সঙ্গে সঙ্গে গতি বাড়িয়ে মুহূর্তে উধাও গাড়িটি। তার আধঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে গেল মুক্তিপণের ফোন— ‘৫ লক্ষ টাকা চাই, নাহলে খবর আছে।’ 

    গত ২৮ মে, বুধবার দিনেদুপুরে কলকাতার ভবানীপুরে ঘটে রোমহর্ষক এই ঘটনা। একেবারে সিনেমার কায়দায়। দু’দিন পর অভিযোগ পেয়েও মাত্র চারঘণ্টায় অপহরণকাণ্ডের কিনারা করল কলকাতা পুলিস। ভয় পেয়ে মুক্তিপণের একাংশ অনলাইনে পাঠিয়েছিল পরিবার। সেই লেনদেনের সূত্র ধরেই শুক্রবার গভীর রাতে অপহৃতকে উদ্ধার করেছেন তদন্তরকারীরা। পুলিস জানিয়েছে, তাঁর নাম তিমিরকান্তি মজুমদার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির একটি সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার তিনি। যাদবপুরে সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোডের একটি আবাসনের ১২তলার ফ্ল্যাট থেকে তাঁকে বের করে আনে ভবানীপুর থানার বিশেষ টিম। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে। ধৃতদের নাম সজল বোস, সুদীপ মজুমদার, সুমন বোস, সমীরকুমার দুবে, সন্দীপন ওরফে চিমা দাস। প্রত্যেকেই যাদবপুরের বাসিন্দা। ওই ফ্ল্যাটটি সজলের। শনিবার অবশ্য ধৃত প্রত্যেককেই শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে আলিপুর আদালত। পুলিস সূত্রে খবর, চোখের সামনে এমন ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন তিমিরবাবুর বন্ধু। ফোনে তিনি বিষয়টি জানান অপহৃতের স্ত্রী তাপসী মজুমদারকে। খবর পাওয়ার আধঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিপণ চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কল আসে বাড়িতে। ‘পুলিসে খবর দিলে স্বামীকে আর দেখতে পাবেন না’— এই হুমকিতে ভয়ে সিঁটিয়ে যান গৃহবধূ। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকাই ছিল। ইউপিআই আইডির সাহায্যে তাপসী তা পাঠিয়ে দেন অপহরণকারীদের কাছে। স্বামীর প্রাণরক্ষায় দু’দিন পর্যন্ত অপহরণের ঘটনা পুলিসকেও জানাননি। কিন্তু বাকি টাকার জন্য চাপ আসতেই শুক্রবার ভবানীপুর থানার দ্বারস্থ হন তিনি। হোয়াটসঅ্যাপ কলের রেকর্ড থেকে অপহরণকারীদের লোকেশন ট্র্যাক করতে ব্যর্থ হয় পুলিস। তদন্তকারীরা তখন সাউথ ডিভিশনের সাইবার সেলের সাহায্য নেন। অনলাইনে ১০ হাজার টাকা লেনদেনের আইডি থেকে পাওয়া যায় মূল অভিযুক্তের লোকেশন।

    বাকি ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য সুকান্ত সেতুর কাছে ডাকা হয় তাপসীকে। তাঁর সঙ্গে সেখানে যান সাদা পোশাকে থাকা এক মহিলা পুলিস। কিছুটা পিছনে থানার স্পেশাল টিম। টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় মূল অভিযুক্ত সজলকে। বাকি চারজনকে ওই ফ্ল্যাট থেকে পাকড়াও করে পুলিস। 
  • Link to this news (বর্তমান)