নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আজ জামাইষষ্ঠী। বাঙালির চিরন্তন কিছু মিষ্টি জামাইয়ের পাতে দেবেন শ্বশুর-শাশুড়িরা। থাকবে কিছু নোনতাও। দোকানগুলি সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে রেকাব সাজাচ্ছে চিরন্তন এবং অভিনব কিছু মিষ্টি দিয়ে। সে তালিকায় পিছিয়ে নেই কেক। সেও ঢুকে পড়েছে বাঙালির উৎসবে।
কলকাতার অন্যতম মিষ্টান্ন বিক্রেতা ‘মিঠাই’য়ে শুধুমাত্র জামাইষষ্ঠীতেই পাওয়া যাবে বেকড গোলাপজাম। সেটি ক্ষীর, সন্দেশ ও গোলাপজামের মিশেলে তৈরি। বেক করা। মিষ্টিটির দেখনদারি যতটা স্বাদও ততটাই ভালো, দাবি মিঠাইয়ের কর্ণধার এবং মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির অন্যতম সংগঠন ‘মিষ্টি উদ্যোগ’-এর সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন ঘোষের। তাঁর কথায়, ‘সন্দেশ, রসের মিষ্টি এবং ড্রাই ফ্রুটসের মিশেলে তৈরি এক রকমের মিষ্টি পাওয়া যাবে, যেগুলি চকোলেটের মোড়ক দেওয়া। ৩০ টাকার এই মিষ্টির চেহারা ওজনদার। এছাড়া রসগোল্লা, কমলাভোগ বা দইয়ের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ে। চিরন্তনী মিষ্টির কোনও বিকল্প নেই। এটি আমরা বিলক্ষণ বুঝতে পারি। ম্যাঙ্গো রোল নামে জামাইষষ্ঠী স্পেশাল একটি মিষ্টান্ন তৈরি হয়। এটি অনেক পুরনো। এখন তৈরির কৌশলে একটু অভিনবত্ব আনা হয়েছে।’
জামাইকে মিষ্টিমুখ করাতে রসগোল্লার এখনও জুড়ি নেই, বলেন অনেকে। দেশপ্রিয় সুইটসের কর্ণধার সমীর ঘোষও সেই দলে। তাঁর কথায়, ‘জাম্বো রসগোল্লার চাহিদা তুঙ্গে। দাম ২৫ টাকা। এছাড়া পেল্লায় তালশাঁস সন্দেশ আছে। একখানা খেলেই জামাই বাবাজীবনের পেট ভরে যাবে। দাম ৮০ টাকা। শাঁখ সন্দেশও পাওয়া যাবে ২৫ ও ৫০ টাকায়। আর সারাবছরই সরভাজার চাহিদা থাকে। জামাইষষ্ঠীতেও সামনে সারিতেই রয়েছে সেগুলি। তাজা আমের রস দিয়ে তৈরি ম্যাঙ্গো সন্দেশ বা রসমাধুরীর মতো চিরাচরিত মিষ্টিও পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এর পাশাপাশি ৩০০ টাকা কেজি দরে জামাইষষ্ঠী স্পেশাল মালাই দইও মিলবে।’
যে কোনও ঐতিহ্যবাহী উৎসবে চিরন্তন মিষ্টির চাহিদা থাকে সবথেকে বেশি, বলেন শতাব্দী প্রাচীন সতীশ ময়রার কর্ণধার অরূপকুমার দাস। তাঁর কথায়, ‘জামাইষষ্ঠী লেখা বড় সন্দেশ থেকে ক্ষীরপুলি—এসবের জনপ্রিয়তায় কোনও খামতি নেই। সঙ্গে আছে নতুন প্রজন্মের পছন্দের অন্যরকমের কিছু মিষ্টি। লিচুর বীজ বাদ দিয়ে, তাতে লিচুর সঙ্গেই সন্দেশের মিশেলের পুর ভরে অভিনব সন্দেশ হোক বা ম্যাঙ্গো মালাই চমচম, এসবের চাহিদাও ভালো। একেবারে আইসক্রিমের ধাঁচে ডিপ ফ্রিজে সন্দেশ ও আইসক্রিমের মিশেলে জমিয়ে তৈরি হচ্ছে স্ট্রবেরি ও ভ্যানিলা আইসক্রিম। ২০ টাকায় এরচেয়ে সুস্বাদু মিষ্টি হয় না।’
মফস্বলে আবার পুরনো ও অভিনব মিষ্টির যুগলবন্দীই পছন্দ ক্রেতাদের, জানালেন মিষ্টি উদ্যোগের অন্যতম সদস্য কালীমাতা সুইটসের কর্ণধার স্বরূপ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘আমরা কোন্নগরে দেখেছি জামাইষষ্ঠীতে বেকড রসগোল্লা, বেকড কালাকাঁদ যতটা জনপ্রিয়, বড় আকারের রসগোল্লা ও কমলাভোগও ততটাই পছন্দের। ম্যাঙ্গো সন্দেশ বা চকোলেটের মিশেলে তৈরি সন্দেশও চাহিদায় এগিয়ে।’
চিরাচরিত মিষ্টির বাইরে নতুন কিছু জামাইকে দেওয়ার ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেন শ্বশুর-শাশুড়িরা। সেক্ষেত্রে কেকের কোনও তুলনা নেই। কেক প্রস্তুতকারক সংস্থা মিও আমোরে’র এক কর্তার কথায়, ‘গত কয়েক বছর ধরে জামাইষষ্ঠী স্পেশাল কেকের চাহিদা বাড়তে দেখছি। এছাড়া বিকেলের জলখাবার বা একটু স্বাদ বদলের জন্য নোনতার চাহিদা বাড়ছে। কেকের তালিকায় আছে ‘রসগোল্লা হাঁড়ি’। দাম ৫০০ টাকা। আছে মাছ ও ম্যাঙ্গো পেস্ট্রি বা ফ্রেশ ফ্রুট কেক। এছাড়াও মিলছে ভাপা চিকেন পাফ, ফিস পাতুরি পাফ, চিকেন শিক কাবাব বা চিজি চিকেন কাটলেট। দাম ৪২ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে।’