• এখন ট্রেড লাইসেন্স ফি ইচ্ছামতো আদায় বন্ধ
    এই সময় | ০১ জুন ২০২৫
  • তাপস প্রামাণিক

    শিল্পবান্ধব রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে তৎপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। সরকারের নয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ব্যবসায়ী, দোকানদার কিংবা শিল্পসংস্থার কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করতে পারবে না কোনও পুরসভা। তার জন্য কড়া নির্দশিকা জারি করল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। তাতে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকার যে ট্রেড লাইসেন্স ফি বেঁধে দেবে, তার বেশি অর্থ নিতে পারবে না পুরসভাগুলি। কোন পুরসভা কত টাকা ট্রেড লাইসেন্স ফি নিতে পারবে, তার একটি তালিকাও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

    সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, মিউনিসিপ্যালিটি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ এবং যে সব নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি আছে, তারা বছরে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স ফি সংগ্রহ করতে পারবে। কলকাতা এবং হাওড়া বাদে বাকি যে সব মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন রয়েছে, তারা বছরে সর্বোচ্চ দু’হাজার টাকা পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স ফি নিতে পারবে। হাওড়া ও কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ফি বেঁধে দেওয়া হয়েছে বছরে আড়াই হাজার টাকা।

    রাজ্যের একাধিক পুরসভা ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও নালিশ ঠুকেছেন শিল্পপতিরা। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফেও নবান্নে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। শিল্প ও ব্যবসায়ী মহলের কাছ থেকে বারংবার অভিযোগ আসায় পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স ফি বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর।

    ট্রেড লাইসেন্স ফি ছাড়াও রাজ্যের অনেক পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ রোজগার বাড়াতে মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ট্যাক্স আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোথাও নাগরিকদের কাছ থেকে জঞ্জা‍ল ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার ডেভলপমেন্ট ফি–র নাম করে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

    যেমন‍, হাওড়া গ্রামীণের উলুবেড়িয়া পুরসভার পক্ষ থেকে জঞ্জাল সংগ্রহের জন্য প্রত্যেক পরিবার পিছু মাসে ৩০ টাকা করে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হচ্ছে। কয়েক মাস আগে আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গলে ঢোকার জন্য বনদপ্তর পর্যটকদের কাছ থেকে গাড়ি পিছু ২৫০০ টাকা ‘এন্ট্রি ফি’ নিচ্ছে! তা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নির্দেশ দেন, জঙ্গলে ঢোকার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া যাবে না।

    সম্প্রতি শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে উত্তরবঙ্গ শিল্প সম্মেলনে এক ব্যবসায়ী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন, জিএসটি দিয়ে পণ্য কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় টোল ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। পুলিশ, এমভিআই–সহ অন্যরাও বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে। যার ফলে পণ্য পরিবহণের খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। এই অত্যাচার বন্ধ করতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন। এই অভিযোগ পেয়েই পাশের আসনে বসে থাকা মুখ্যসচিবকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

    পরে ফুলবাড়ির হেলিপ্যাড সংলগ্ন ময়দানে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, শিল্পপতিদের কাছ থেকে মিউটেশন ফি’র নাম করে ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি চললেও ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এ ভাবে বার বার ট্যাক্স আদায় করা যাবে না।

    মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে রাজ্যের প্রত্যেক জেলাশাসক ও বিডিওদের কাছে নতুন করে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দপ্তর। তাতে বলা হয়েছে, নবান্নের অনুমতি ছাড়া পঞ্চায়েত কিংবা জেলা পরিষদ সাধারণ মানুষ কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনও কর বা ফি আদায় করতে পারবে না। তার জন্য অর্থ দপ্তরের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে।

  • Link to this news (এই সময়)