• তিস্তা নদীর পুরনো রূপ ফিরিয়ে আনতে বড় পদক্ষেপ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০১ জুন ২০২৫
  • ২০২৩ সালে সিকিমের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে উত্তরবঙ্গের তিস্তা নদীতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। পাহাড়ি ধ্বসের ফলে নদীর তলদেশ পলি, বালি ও পাথরে ভরে গিয়ে নাব্যতা হ্রাস পায়। তার ফলে নদীর গতিপথও বদলে যায়। সেই ক্ষত মেরামত করতে এবার বড়সড় উদ্যোগ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। তিস্তা নদীর পুরনো গতিপথ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বর্ষা পরবর্তী সময়ে নদী খননের কাজ শুরু হবে জলপাইগুড়িতে।

    রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে সায় দিয়েছে। কাজটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ এমডিটিসিএল (মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড)। সেচ দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পে তিস্তার একাধিক অংশে খনন চালানো হবে। প্রথম পর্যায়ে সেবক পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে মালবাজার, রাজগঞ্জ, সদর ব্লক হয়ে ময়নাগুড়ি পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার নদীপথে খনন হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

    সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক জানিয়েছেন, ‘নদীর বিভিন্ন অংশে ১ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত খনন করা হবে। কোথায় কীভাবে খনন হবে, সে ব্যাপারে আমরা সবরকম সাহায্য করব।’ খনন প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণে বালি ও পলি তোলা হবে, যা বিক্রির মাধ্যমে রাজ্য সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পথও খুলে দেবে।

    তিস্তার পাড় সংলগ্ন লালটং বস্তি ও চমকডাঙির মতো এলাকা ২০২৩ সালের বন্যায় কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। নদীর পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়ায় বন্যার ঝুঁকিও বেড়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই রাজ্য সরকার গত বছরই নদী খননের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠায়। দীর্ঘ সমীক্ষা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে অবশেষে সেই প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।

    তবে এখনই খনন কাজ শুরু হচ্ছে না, কারণ উত্তরবঙ্গে ইতিমধ্যেই বর্ষা প্রবেশ করেছে। বর্ষা শেষে দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। কাজ সম্পূর্ণ হলে আগামী বর্ষার আগেই তিস্তাকে তার প্রাকৃতিক পথ ধরে চালিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে প্রশাসন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খনন শুধু নদীকে স্বাভাবিক গতিপথে ফিরিয়ে আনবে না, পাশাপাশি তিস্তার পাড় রক্ষায় বড় ভূমিকা নেবে। স্থানীয় মানুষও এই প্রকল্পে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)