এই সময়, কালিয়াগঞ্জ: তা সে এসি ঘরে বসে জামাইকে বাটা দেওয়া হোক কিংবা দামি রেস্তোরাঁয়, কিছু আচার–রীতি রয়েই যায়। যেমন রয়ে গিয়েছে বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানে তালপাতার হাতপাখার ব্যবহার। তবে এখন এসি–কুলারের যুগে তো আর ঘরে ঘরে তালপাতার পাখা পাওয়া যায় না। কিন্তু ষষ্ঠীতে জামাইকে তালপাতার পাখার বাতাস তো করতেই হবে। সেই উপলক্ষে বেড়ে যায় তার চাহিদা। ফলে দু’পয়সা আয়ের মুখ দেখেন কারিগররা।
জামাইষষ্ঠীর আগের দিন এমনই ছবি ধরা পড়ল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। পাখা তৈরির কারিগরদের ঘরে ঘরে ব্যস্ততা তুঙ্গে। সেই সঙ্গে চলছে বাজারে ঘুরে ঘুরে পাখার খোঁজ, দরদাম। শাশুড়ির সাজানো ভোজের সামনে জামাই যখন বসবেন, তখন তাঁকে বাতাস করার জন্য চাই এই পাখা।
বাজারে পাখা কিনতে আসা স্থানীয় পাপিয়া ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের মা-কাকিমারা জামাইদের খেতে দিয়ে পাশে বসে হাওয়া করতেন। তবে এখন আর সে দিন নেই। অনুষ্ঠানে নিয়ম রক্ষার্থে একবার হলেও জামাইকে বাতাস করার জন্য হাতপাখা দরকার। ঘরে তো এখন আর তেমন হাতপাখার দরকার হয় না। তাই এই উপলক্ষে পাখা কিনতে হয়।’
পাখা কারিগর হেমন্ত অধিকারী, আশা অধিকারীদের বক্তব্য, ‘এখন আর আগের মতো হাতপাখা বিক্রির চল একেবারে কমে গিয়েছে বললেই চলে। বিশেষ কয়েকটি অনুষ্ঠানে এই পাখার প্রচলন রয়ে গিয়েছে। তেমনই জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে পরিবারের সকলে মিলে পাখা তৈরিতে হাত লাগাই। আমাদেরও কিছু বাড়তি রোজগার হয়।’
জানা গিয়েছে, কালিয়াগঞ্জের ভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের টুঙ্গিলবিলপাড়ার বহু পরিবার এই কাজে যুক্ত। কারিগরেরা জানিয়েছেন, সারা বছর তারা অন্য কাজ করলেও মূলত গ্রীষ্মকালে তালপাতা, বাঁশ, সুতো, কাপড় দিয়ে হাতপাখা তৈরি করেন তাঁরা। পাশাপাশি বাজারের চাহিদা মতো কাপড়ের হাতপাখাও বানাচ্ছে তারা। সেগুলি কালিয়াগঞ্জ–সহ আশপাশের বিভিন্ন হাটে–বাজারে খুচরো ও পাইকারি দরে বিক্রি হয়৷
বাজারে প্রতিটি পাখার দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার আশপাশে। পাশাপাশি পাইকাররা তাঁদের কাছ থেকে পাখা প্রতি ১৭ থেকে ১৮ দরে তা কেনেন। তাঁরা আরও জানালেন, শুধু জামাই ষষ্ঠীতেই নয়, গ্রামেগঞ্জে লেগেই থাকে বট পাকুড়ের পুজো (পাশাপাশি কোনও বট ও পাকুড় গাছ পাওয়া গেলে সেগুলিকে শিব ও পার্বতী রূপে পুজো করা হয়)। সে সময়েও এই হাত পাখার প্রয়োজন হয়৷ তখনও বাড়তি কিছু লাভ করেন তাঁরা। প্রতি বছরের মতো এ বারেও তাই জামাইষষ্ঠীর আমেজে আশায় স্বপ্ন বুনছেন পাখা কারিগররা।