• জামাইয়ের মতো যত্ন পায় বৃক্ষ, 'অরণ্য ষষ্ঠী'তে মেতে উঠেছে বাঁকুড়া
    আজকাল | ০১ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: যখন দুই বাংলার ঘরে ঘরে ঘটা করে পালিত হচ্ছে জামাইষষ্ঠী, তখন বাঁকুড়ার অরণ্যবেষ্টিত প্রান্তরে অনন্য রীতিতে পুজো পাচ্ছে বট-অশ্বথ-আম-জাম-কাঁঠাল গাছ। প্রকৃতির সন্তান এই বৃক্ষগুলোকেই জামাইয়ের মর্যাদায় ভূষিত করে বাঁকুড়াবাসী পালন করলেন 'অরণ্য ষষ্ঠী'।

    বাঁকুড়ার মানুষের চিরকালীন বিশ্বাস—গাছই রক্ষা করে জীবন। প্রকৃতি হল আশ্রয় ও শান্তির উৎস। তাই পুরনো লোকাচার মেনে প্রতি বছর জামাইষষ্ঠীর দিনটিতে তাঁরা গাছকেই ‘জামাই’ রূপে পুজো করে থাকেন। গ্রামের মহিলারা এই বিশেষ দিনটিকে বলেন ‘অরণ্য ষষ্ঠী’। একদিকে যখন শহুরে জীবনে জামাইয়ের জন্য সাজিয়ে দেওয়া হয় সুস্বাদু খাবারের পঙ্‌ক্তি, তখন বাঁকুড়ায় গাছের গোড়ায় সাজানো হয় ফল-মূল, পায়েস, ফুল ও অন্যান্য নৈবেদ্য।

    এই রীতির উৎস ব্যাখ্যা করে লোক গবেষকরা জানিয়েছেন, 'অরণ্য এই জেলার রুজি-রোজগার, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক সংস্কারেরও সাক্ষী। তাই গাছকেই কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন হল অরণ্য ষষ্ঠী।' এই দিন সকালে ব্রতীরা সেজগুজে গাছের গোড়ায় এসে পুজোর আয়োজন করেন। পুরোহিতরা শতাব্দী প্রাচীন এই রীতিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, 'যেখানে পৃথিবীজুড়ে বৃক্ষ নিধনের প্রতিযোগিতা, সেখানে এই ব্রত আমাদের সচেতন করে তোলে, বাঁচাও গাছ, বাঁচাও জীবন।' 

    বৃক্ষের পুজো করতে আসা এক ব্রতী বলেন, 'সংসারের মঙ্গল কামনায় প্রতি বছর এই পুজো দিয়ে থাকি। আমাদের পূর্বপুরুষরাও এই ব্রত পালন করতেন।' অন্য একজন যোগ করেন, 'এই পুজোর মাধ্যমে অরণ্যের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। গাছ আমাদের ছায়া দেয়, ফল দেয়, শান্তি দেয়। তাই আজকের দিনে তাদের পুজো করে সম্মান জানাই।' 

    আজ যখন আধুনিকতা গ্রাস করছে গ্রামীণ ঐতিহ্য, তখন বাঁকুড়ার এই ব্রত যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সেতুবন্ধনকে আরও একবার মনে করিয়ে দেয়—আমরা প্রকৃতির সন্তান, আর প্রকৃতি আমাদের চিরন্তন আশ্রয়।
  • Link to this news (আজকাল)