‘মমতার উন্নয়নের বিরুদ্ধে লড়ব কোন অস্ত্রে?’ কর্মীদের প্রশ্নে অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব
বর্তমান | ০২ জুন ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের বিরুদ্ধে লড়ব কোন অস্ত্রে? গত ২৯ মে আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে উত্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেইঅর্থে কিছুই ঘোষণা না করায় এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিজেপির অন্দরে। দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, শুধু কি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ইস্যু তুলে ধরেই মানুষের ভোট পাওয়া যাবে? সাধারণ মানুষ যদি প্রশ্ন করে, বিজেপির এতজন সাংসদ, মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্প আসছে না কেন, সেক্ষেত্রে কী জবাব দেব?
সরাসরি স্বীকার না করলেও দলের কর্মীদের এই প্রশ্নের যে যুক্তি রয়েছে তা মানছে উত্তরের বিজেপি নেতৃত্বের অনেকেই। কারণ, ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকমাস অন্তর উত্তরবঙ্গে আসেন। আর যখনই উত্তরে তিনি আসেন, প্রতিটি জেলার জন্য ঢালাও উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেন। গত মাসেই শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ির ময়দান থেকে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার জন্য আড়াইশো কোটিরও বেশি টাকার ৩৬৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ১৩৪টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৮৯ কোটিরও বেশি টাকা। ফলে আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের জন্য অন্তত কিছু প্রকল্প ঘোষণা করবেন, এমনটাই ভেবেছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা। বিশেষ করে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে যেখানে চা বাগানের শ্রমিকরা চা সুন্দরী প্রকল্পে ঘর পাচ্ছেন, জমির পাট্টা মিলছে, ক্রেশ, হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে, চা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের জন্য বাস নামানো হচ্ছে, সেখানে চা শ্রমিকদের উন্নয়নে মোদি কিছু না কিছু ঘোষণা করবেন, এমনই আশা ছিল উত্তরের বিজেপি নেতৃত্বের।
কিন্তু তাঁদের হতাশ হতে হয়েছে। একমাত্র আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার জন্য সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্পের শিলান্যাস ছাড়া মোদির সফরে উত্তরবঙ্গবাসীর প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য। সেক্ষেত্রে বিধানসভা নির্বাচনে মমতার উন্নয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার হাতিয়ার কী হবে, সেই প্রশ্নই তুলছেন গেরুয়া শিবিরের নিচুতলার কর্মীরা।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বের আশ্বাস, উত্তরবঙ্গে অনেক কেন্দ্রীয় প্রকল্প চলছে। আরও হবে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গে এইমস হাসপাতালও হবে। এজন্য একটু ধৈর্য্য দরকার। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের উত্তরবঙ্গের কো-অর্ডিনেটর, ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন বলেন, আসলে প্রধানমন্ত্রী আগাম কিছু ঘোষণা করেন না। প্রকল্প তৈরি করে, টাকা বরাদ্দ করে তবেই তিনি ঘোষণা করেন। আমরা নিশ্চিত, উত্তরবঙ্গে এইমস হবে। বাজেটে টাকা বরাদ্দ করেই এ ব্যাপারে তিনি ঘোষণা করবেন।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বরাইকের তোপ, আলিপুরদুয়ারে রেলের জমিতে কেন্দ্রীয় হাসপাতালের দাবি তো স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের। এতদিনে তা ঘোষণা হল না কেন? আসলে সবটাই বিজেপির ভাঁওতাবাজি। চা শ্রমিকদের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর মুখে কোনও কথা শোনা যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা চা বাগানগুলির দুরাবস্থা কেন, এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
প্রসঙ্গত, মোদির সফরের আগে আলিপুরদুয়ারে রেলের জমিতে কেন্দ্রীয় হাসপাতাল ও হাসিমারায় সিভিল এয়ারপোর্টের দাবিতে শহরে হোর্ডিং পড়ে। এই দু’টি প্রকল্প মোদি ঘোষণা করতে পারেন বলে পদ্ম শিবিরে কানাঘুষো শোনা যায়। কিন্তু নিট ফল শূন্য। এনিয়ে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গার সাফাই, রাজ্য সরকারকে শুধু লিখে দিতে হবে, আলিপুরদুয়ারে ওই কেন্দ্রীয় হাসপাতাল হলে তাদের কোনও আপত্তি নেই। তাহলেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারবে।