নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: একরাতে একাধিক জায়গায় ভারী বৃষ্টি। সমতলে বৃষ্টির পরিমাণ কোথাও ৭৬, আবার কোথাও ৮৩ মিলিমিটার। দোসর পাহাড়ের বৃষ্টি। এরজেরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীর জলস্তর ঘনঘন ওঠা-নামা করছে। রবিবারও তিস্তা ও জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় জারি ছিল হলুদ সঙ্কেত। এরবাইরে একাধিক নদীর জলস্তর ‘স্টেডি’ বা স্থিতিশীল। এই অবস্থায় আজ, সোমবারও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। এনিয়ে পাহাড়ে ধস এবং সমতলে বন্যা ও নদী ভাঙনের আশঙ্কা প্রবল। এর মোকাবিলায় চরম সতর্কতা জারি করেছে মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুম। তারা প্রতিটি জেলার ক্যুইক রেসপন্স টিমকে (কিউআরটি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
মৌসুমি বায়ু প্রবেশের দু’দিনের মধ্যে শনিবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা জলপাইগুড়ি জেলায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। যারমধ্যে রেকর্ড বৃষ্টির পরিমাণ নাগরাকাটা ও ডায়নায়, যথাক্রমে ৭৬.২০ এবং ৭৩.২০ মিলিমিটার। জঙ্গল, নদী ও চা বাগান ঘেরা আলিপুরদুয়ার জেলারও অবস্থা একই। চলতি মরশুমে জেলার ভুটানঘাটে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড, যা ১০৯.৮ মিমি। এরবাইরে নিউল্যান্ড টি গার্ডেনে ৯৪.২, বক্সাদুয়ারে ৮৯.৬ ও তোর্সা চা বাগানে ৮০.৭ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। কোচবিহার জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০ থেকে ৬১ মিমি। শিলিগুড়িতে ২৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিম ও ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টি অব্যাহত। এরজেরে উত্তরবঙ্গের তিস্তা, জলঢাকা ও রায়ডাক নদীর জলস্তর ক্রমবর্ধমান। সেচদপ্তর সূত্রের খবর, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তা নদীতে জারি রয়েছে হলুদ সঙ্কেত। সংশ্লিষ্ট এলাকায় নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে জলপাইগুড়ির ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কোচবিহার জেলার মাথাভাঙা পর্যন্ত জলঢাকা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় জারি রয়েছে হলুদ সঙ্কেত। নাগরাকাটায় জলঢাকা ফুঁসছে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জে বাড়ছে রায়ডাক নদীর জল। সেভকের করোনেশন সেতুর কাছে তিস্তা, কোচবিহারের ঘুঘুমারিতে তোর্সার জলস্তর স্থিতিশীল।
এমন প্রেক্ষাপটে আজও (সোমবার) ভারী বৃষ্টি হবে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের অধিতর্কা গোপীনাথ রাহা জানান, ভারী বৃষ্টি নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তা প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে মঙ্গলবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। দিনের তাপমাত্রা বাড়বে। ভারী বৃষ্টি না হলেও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বভাস নিয়ে প্রতিটি জেলার নদীর তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কিত। অনেকে বন্যার আশঙ্কা করছেন। এনিয়ে সতর্ক উত্তরকন্যা। রবিবার মিনি সচিবালয়ের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতিটি জেলাকে সতর্ক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, এদিন সকালে গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ থেকে ছাড়া হয়েছে ২৮২৭.৬২ কিউমেক জল। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে নদীগুলির উপর নজর রাখা হচ্ছে। নদী ভাঙন, বাঁধ রক্ষা সহ যেকোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় জেলাগুলিকে কিউআরটি প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। ধস মোকাবিলায় আর্থমুভার, গাছ কাটতে করাতের পাশাপাশি পুলিসের আরটি ও স্যাটেলাইট ফোন নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা প্রশাসন। গজলডোবায় তিস্তা। - নিজস্ব চিত্র।