• মালদহে চার মাসে ২৪ নাবালিকার বিয়ে, ২৩টি কেসে এফআইআর জেলা প্রশাসনের
    বর্তমান | ০২ জুন ২০২৫
  • সন্দীপন দত্ত, মালদহ: বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো! মালদহে সংক্রমণের মতো বাড়ছে নাবালিকা বিয়ে। এবছর প্রথম চার মাসে ২৪ জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে জেলায়। প্রশাসনিক বিধিনিষেধ রয়েছে। চলছে জোরকদমে প্রচার। তবুও কেন এত নাবালিকার বিয়ে?উত্তর খোঁজার উদ্যোগের মাঝে পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বিগ্ন নানা মহল। তবে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সব কেসেই এফআইআর করেছে জেলা প্রশাসন। 

    জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া বলেন,নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। নাবালিকা বিয়ের খবর পেলেই সেখানে গিয়ে প্রিভেনশন অফ চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্টে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

    মালদহে গত বছরের তুলনায় এবার নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ২৪ জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। তারমধ্যে জানুয়রি মাসে চার, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ, মার্চে সবচেয়ে বেশি আট এবং এপ্রিলে সাত নাবালিকার বিয়ে হয়। নাবালিকা বিয়ে রুখতে জেলা প্রশাসন যে অত্যন্ত কড়া মনোভাব নেবে, সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৩ জন নাবালিকার পরিবার ও তাদের শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানাগুলিতে এফআইআর করেছে প্রশাসন। 

    মালদহ জেলায় ২০২৪ এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে মাত্র সাতজন নাবালিকার বিয়ে হয়েছিল। গত বছর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দু’জন করে মোট ছয় নাবালিকার বিয়ে হয়। এপ্রিলে বিয়ে হয় আরও একজনের। ওই বছর প্রশাসন এফআইআর করেছিল ছ’টি।

    প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে,এদের নাবালিকাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। নাবালিকা বিয়ে রুখতে ইতিমধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ব্লক স্তরে সচেতনতামূলক বৈঠকের জন্য প্রশাসনের তরফে ক্যালেন্ডার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তার জন্য গুগল শিট তৈরি করে সেখানে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে প্রধান, প্রত্যেককেই এগিয়ে এসে বিয়ে বন্ধ করার বিষয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই সামাজিক নানা কারণে পঞ্চায়ের সদস্যদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এতে অনেক এমন গ্রাম, পঞ্চায়েত এলাকা আছে, যেখানে নাবালিকা বিয়ে রুখতে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে না।

    মালদহ জেলার মধ্যে গত কয়েক বছরে কালিয়াচক, রতুয়া, ইংলিশবাজার, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুরে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে। একেবারে তৃণমূল স্তরে গিয়ে বারবার প্রশাসনের তরফে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রত্যেক মেয়েদের স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব করে সেখানে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের বিপদ সম্পর্কে ছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে। অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারগুলিতেও প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে, ফল কতটা মিলছে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)