সাধারণ যাত্রীর বেশে উত্তরবঙ্গ থেকে গাঁজা আনত কুলটির পূজা
বর্তমান | ০২ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বয়স ৩৫ বছর। চালচলন অত্যন্ত সাধারণ। পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির বাসিন্দা পূজা কীর্তনিয়াকে দেখে কারও বোঝার উপায় নেই সে কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে। প্রায়ই সে ট্রেনে উত্তরবঙ্গে যেত। সাধারণ যাত্রীদের মতোই সে সিটে বসে থাকত। তবে প্রতিবারই ট্রেনযাত্রার সময় আলাদা পোশাক পরত। কখনও শাড়ি আবার কখনও চুড়িদার পরে সে গাঁজা আনার কাজ করত। দেখতে সাদামাটা হলেও আরপিএফের কাছে সে ছিল মোস্ট ওয়ান্টেড। শনিবার বর্ধমান স্টেশন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে আরপিএফ। সে কোচবিহার থেকে গাঁজা এনে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পাচার করত। সে ছিল টিমের মূল মাথা। কীভাবে উত্তরবঙ্গে থেকে গাঁজা এনে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হবে, সেটা সে-ই ঠিক করত। তবে সে চক্রের মাস্টামাইন্ড নয়। উত্তর চব্বিশ পরগনার এক কারবারির অধীনে সে ক্যারিয়ারের কাজ করত।
এক আধিকারিক বলেন, চক্রের মাস্টার মাইন্ডরা ক্যারিয়ার হিসেবে যুবতী এবং মহিলাদের এখন বেশি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে ‘ফ্রেশ’ মুখের কদর তাদের কাছে অনেক বেশি। ক্যারিয়ারদের প্রতিবার চার-পাঁচ হাজার টাকা কমিশন দেওয়া হয়। এছাড়া যাতায়াতের খরচও তাদের দেওয়া হয়। পূজা পশ্চিম বর্ধমানেও বিভিন্ন জায়গায় গাঁজা সরবরাহ করত। সে বর্ধমান স্টেশনে গাঁজার ব্যাগ নামিয়ে বাস ধরে আসানসোলে পৌঁছত। সেখানে নির্দিষ্ট ঠিকানায় তা পৌঁছে দেওয়ার পরই মোটা টাকা হাতে পেয়ে যেত।
আরপিএফ জানিয়েছে, শনিবার বর্ধমান স্টেশনে একটি ট্রেনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫৪কেজি গাঁজা সহ ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে পূজা ছাড়াও তার গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি কোচবিহারে। রাজ্যে বেশিরভাগ গাঁজা কারবারি ওড়িশা থেকে নিয়ে আসে। কোচবিহারের গাঁজার দাম অনেক বেশি। নেশাগ্রস্তদের কাছে সেটির চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। লাভ বেশি থাকায় কারবারিরা কোচবিহার থেকে গাঁজা এনে বিক্রি করে। ডিলাররা ছোট ছোট পুরিয়া করে তা ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি করে।
এক আধিকারিক বলেন, পূজার মতো আরও অনেক মহিলা এবং যুবতী এই কারবারে শামিল হয়ে গিয়েছে। টাকার লোভ দেখিয়েই কারবারিরা তাদের জালে তোলে। গাঁজার পাশাপাশি যুবতী এবং মহিলাদের অস্ত্র পাচারের কাজেও নামানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই কেতুগ্রামের এক মহিলাকে এসটিএফ আগ্নেয়াস্ত্র সহ পাকড়াও করে। সেও চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্যারিয়ারের কাজ করত।