ক্ষমতায় থেকেও পার্টি অফিস গড়তে ব্যর্থ, ব্যাপক ক্ষুব্ধ পুরুলিয়া জেলার তৃণমূল কর্মীরা
বর্তমান | ০২ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: সপ্তাহখানেক আগেই পুরুলিয়া শহরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ঝাঁ চকচকে জেলা পার্টি অফিস উদ্বোধন করেছে বিজেপি। অথচ, জেলায় আজও কোনও জেলা পার্টি অফিস তৈরি হল না তৃণমূলের! পার্টির জন্মলগ্ন থেকে যখন যিনি জেলা সভাপতি থেকেছেন, তখনই নিজের মতো পার্টি অফিস বদল করেছেন। সেই অফিসে অবশ্য দলের বাকি নেতাকর্মীদের সেভাবে ঠাঁই হয়নি। এনিয়ে ব্যাপক আক্ষেপ রয়েছে দলের সাধারণ কর্মীদের।
কিছুদিন আগেই পুরুলিয়া শহরের নেতৃত্বদের এনিয়ে বৈঠক করেন জেলা সভাপতি রাজীব লোচন সরেন এবং চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাত। সেই বৈঠকেই দলের নেতাকর্মীরা আরও একবার পার্টি অফিসের প্রসঙ্গ উস্কে দেন। জেলা নেতৃত্বের কাছে পার্টি কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, সম্প্রতি নতুন পার্টি অফিস তৈরি করে ফেলল বিজেপি। অথচ, রাজ্য থেকে শুরু করে পুরুলিয়া পুরসভা, জেলা পরিষদে ক্ষমতায় থাকা সত্বেও কেন তৃণমূলের জেলা পার্টি অফিস হবে না? কর্মীদের এই ক্ষোভের কারণ খুবই সঙ্গত বলেই জানিয়েছিলেন রাজীব ও শান্তিরামবাবু। দলের জেলা সম্পাদক তথা কাউন্সিলার বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, ‘ক্ষমতাসীন একটা দল হওয়া সত্বেও পার্টি অফিস করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের আজও যাযাবরের মত ঘুরতে হয়।’
১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরির সময় পুরুলিয়া জেলার কনভেনার করা হয়েছিল জয় বন্দ্যোপাধায়কে। তাঁরও আক্ষেপ, ‘তখন আদ্রার পার্টি অফিস থেকেই আমি তখন দল পরিচালনা করতাম। তবে তার এত বছর পরেও জেলা কার্যালয় তৈরি না হওয়াটা দুর্ভাগ্যের।’ দল প্রতিষ্ঠার কিছু বছরের মধ্যেই জেলা সভাপতির দায়িত্ব পান কেপি সিংদেও। বিটি সরকার রোডে দলীয় কার্যালয় খোলেন তিনি। অর্থাৎ, নিজের বাড়ির বৈঠকখানা থেকেই দল পরিচালন করতেন। ২০০৯ সালে জেলা সভাপতি করা হয় শান্তিরাম মাহাতকে। তিনি দলীয় কার্যালয় সরিয়ে নিয়ে যান বাসস্ট্যান্ডের কাছে প্রয়াত নেতা সীতারাম মাহাতোর বাসভবনে। ২০২০ সাল নাগাদ জেলা সভাপতি করা হয় গুরুপদ টুডুকে। নতুন কার্যালয় গড়ে ওঠে শহরের দুলমি এলাকায়। ২০২১ সালের আগস্টে তাঁকে সরিয়ে জেলা সভাপতি পদে নিয়ে আসে হয় সৌমেন বেলথরিয়াকে। রাতারাতি দুলমির অফিসে তালা ঝুলে যায়। বহু খুঁজে অবশ্য দেশবন্ধু রোডে একটি বাড়ি পান সৌমেন। সেখান থেকেই দলীয় কাজকর্ম পরিচালন করতে থাকেন। এরজন্য অবশ্য ‘পুরস্কারও’ পেয়েছিলেন ওই বাড়ির এক সদস্য! আশ্চর্যজনকভাবে অনেককে ডিঙিয়ে সরকারি আইনজীবীর পদ পেয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি, সৌমেনকে পদ থেকে সরিয়ে জেলা সভাপতি করা হয়েছে বান্দোয়ানের বিধায়ককে। পার্টি অফিসের খোঁজ করছেন তিনিও। দুলমি এলাকায় একটি বাড়ি খুঁজে পেলেও এখনও তার উদ্বোধন হয়নি অবশ্য। কর্মীদের প্রশ্ন, এত বছরের ক্ষমতাসীন একটা দলের পার্টি অফিস কবে হবে? শান্তিরামবাবু বলেন,‘আমি পদে থাকাকালীন পার্টি অফিস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলাম। রাজ্যের চূড়ান্ত অনুমোদনের অভাবে সেই কাজ মাঝপথে থমকে যায়। তবে, ফের পার্টি অফিস তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি আমরা।’