নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: হস্টেলের ঘাটতি থাকায় ছাত্রছাত্রীদের স্থান সঙ্কুলান করতে নাভিশ্বাস উঠছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের। প্রয়োজনের তুলনায় বর্তমানে হস্টেলে আসন সংখ্যা রয়েছে অর্ধেক। তারফলে মেডিক্যালের পড়ুয়াদের বাধ্য হয়ে বাঁকুড়া শহর ও সংলগ্ন এলাকায় মেস অথবা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা এক ডাক্তারি পড়ুয়ার বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর হস্টেল সমস্যা সমাধান করতে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে। এমবিবিএসের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্র বাঁকুড়া শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। দুর্ঘটনার পর বাড়ির মালিক খবর পেয়ে ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। ততক্ষণে মাথায় গুরুতর চোট ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে ছাত্রের অবস্থার অনেকটাই অবনতি হয়। বহুক্ষণ পর বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। পরে ওই ছাত্রকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করার পরেও বাঁচানো যায়নি। মেডিক্যালের হস্টেলে থাকলে ওই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা অনেকাংশে এড়ানো যায় বলে পড়ুয়াদের দাবি। দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও সমস্যা হলে দ্রুত সহপাঠীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি অন্যান্য ছাত্রদের কাছে খবর পেয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
এব্যাপারে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাটি আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যাপ্ত হস্টেলের পরিকাঠামো থাকলে ওই ছাত্রকে বাইরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হতো না। আমরা হস্টেলের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখা হয়েছে। এমবিবিএসের এক ছাত্র বলেন, হস্টেলে থেকে হেঁটেই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আমরা যাতায়াত করতে পারি। ফলে অযথা বাইক চালানোরও দরকার পড়ে না। সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমে যায়। দ্রুত সমস্যা মিটলে ভালো হয়।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বাঁকুড়া সম্মিলনীতে স্নাতক স্তরে ১০০০ জন, ইন্টার্ন ২০০ জন, হাউস স্টাফ ৭০ জন ও স্নাতকোত্তর স্তরে পিজিটি এবং সিনিয়র রেসিডেন্ট মিলিয়ে প্রায় ৩২০ জন রয়েছেন। ফলে সবমিলিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়ার সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অথচ বর্তমানে হস্টেলে মাত্র ৮০০ জনের থাকার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। ফলে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও বাইরে থেকে পড়াশুনা করতে হচ্ছে। তারফলে খরচ ও সময় অপচয়ের পাশাপাশি নানা ঝক্কিও পড়ুয়াদের পোহাতে হচ্ছে।
এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ১৯৬১ সালে আমরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের স্বীকৃতি পাই। প্রথমে এমবিবিএসে মাত্র ৫০টি আসন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে স্নাতকস্তরে ওই আসন সংখ্যার নিরিখেই ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছিল। তাতে তেমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু গত কয়েকবছরে তা দ্রুত হারে বেড়ে ২০০টি হয়েছে। আগে বাঁকুড়া মেডিক্যালে সিনিয়র রেসিডেন্ট পদে কেউ ছিলেন না। বর্তমানে ওই পদেও পড়ুয়া রয়েছেন। আসন তথা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও হস্টেলের পরিকাঠামো বাড়েনি। তারফলে সমস্যা হচ্ছে।