নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: রবিবার সকালে কৃষ্ণগঞ্জ থানার টুঙ্গি রেলগেট সংলগ্ন এলাকা থেকে এক গৃহবধূর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিস জানিয়েছে, মৃতার নাম মুক্তি বিশ্বাস(৪০)। এদিন সকালে স্থানীয়রা প্রথম মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা কৃষ্ণগঞ্জ থানায় খবর দেন। ওই মহিলা বেনারসি শাড়ি পরে ছিলেন। পাশে সিঁদুরের কৌটোও পাওয়া গিয়েছে। পুলিস এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পাঠায়। মৃতার বাপের বাড়ির তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গৃহবধূর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ক্ষত রয়েছে বলে পুলিস জানিয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে, যৌন নির্যাতনের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সন্দেহের তালিকায় গৃহবধূর দুই প্রেমিক রয়েছে। ইতিমধ্যেই একজন প্রেমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই খুন বলে মনে হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে রবিবার বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার ডিএসপি শিল্পী পাল বলেন, গৃহবধূর মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি কৃষ্ণগঞ্জের গোখুরাগাছি এলাকায়। প্রায় ১৬ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। ওই মহিলার বাপেরবাড়ি কৃষ্ণগঞ্জ থানার দুর্গাপুর এলাকায়। তবে শুরু থেকেই স্বামীর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল না। রবিবার খুনের ঘটনার পর তাঁর স্বামী তেঁতুল বিশ্বাস পুলিসকে জানান, স্ত্রীর সঙ্গে একাধিক ব্যক্তির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই পরিবারে অশান্তি হতো। শনিবার ও বারাকপুরে দিদির বাড়ি গিয়েছিল। রবিবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। আমার সঙ্গে রাত সাড়ে ৮টায় শেষ কথা হয়েছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে খুনের ঘটনা জানতে পারি।
পুলিসের অনুমান, দুই প্রেমিকের মধ্যে বিবাদের কারণেই খুন হতে হয়েছে ওই গৃহবধূকে। তবে কে প্রত্যক্ষভাবে খুনের জন্য দায়ী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিস প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, মাস খানেক আগে ওই গৃহবধূ তাঁর পুরনো প্রেমিককে ছেড়ে সম্প্রতি নতুন প্রেমিকের হাত ধরেছিলেন। তাঁর সঙ্গেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতেন। ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। মনে করা হচ্ছে, গৃহবধূর একাধিক সম্পর্কের কথা উভয় প্রেমিকই জানতে পেরেছিল। প্রতিশোধ নিতেই তাদের মধ্যে কেউ একজন খুনের ঘটনা ঘটাতে পারে। ভোররাতে গৃহবধূকে শেষবার ফোন করেছিল তাঁর নতুন প্রেমিক। যদিও তাদের মধ্যে কথা হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। শ্বশুরবাড়ি গোখুরাগাছি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরেই বধূর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে।
বেনারসি শাড়ি পরা অবস্থায় গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া এবং তাঁর কাছ থেকে নতুন সিঁদুর কৌটো পাওয়া যাওয়ায় রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কী কোনও প্রেমিককে বিয়ে করতে গিয়েই খুন হতে হয়েছে ওই গৃহবধূকে। পুলিস জানিয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।