ক্যাসিনোতে টাকা খুইয়ে সর্বস্বান্ত যুবক, কিডনি বিক্রি করে ধার মেটানোর চেষ্টা
বর্তমান | ০২ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ক্যাসিনোর নেশায় সব ভুলতে বসেছিলেন যুবক। তাই অনলাইন ক্যাসিনো খেলে লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা হয়েছিল তাঁর। সেই টাকা স্বাভাবিক উপায়ে শোধ করতে না পেরে নিজের কিডনিই বেঁচে দিলেন যুবক। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার যুবক রৌশান জামানের কীর্তি শুনে একেবারে আঁতকে উঠল পুলিস। ভগবানগোলার উপর অড়হর সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক একটি ডেলিভারি সংস্থায় কাজের সূত্রে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বহরমপুরের গোরাবাজারের একটি মেসে থাকতেন। সেখানে এক বন্ধুর টাকা প্রতারণা করার মামলায় পুলিস শনিবার রাতে রৌশানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ল। ধৃতকে রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলা আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বহরমপুর থানার পুলিস।
জানা গিয়েছে, রৌশানের বাবার ওষুধের দোকান আছে। তাঁর দাদা পশু চিকিৎসক এবং এক ভাই ডাক বিভাগে চাকরি করেন। রৌশান নিজেও একটি নামী বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করতেন। তিনি গ্রাজুয়েশন পাস করার পরেই আইটিআইতে পড়াশোনা করেছেন। তবে পড়াশোনার মাঝেই বিভিন্ন অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েন। গেম খেলে ভালো টাকা উপার্জন করতে থাকেন। এরপরই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। নিজের গেম খেলে উপার্জন করা টাকা অনলাইন ক্যাসিনো খেলতে খেলতে হেরে যান। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়লে বাড়িতে মা বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পাশাপশি দাদার কাছ থেকে মোটা টাকা ধার নিয়েছিলেন তিনি। সেই টাকাও গেম খেলে নষ্ট করে ফেলেন। একদিন দাদার সঙ্গে অশান্তি করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। দাদার ধার দেওয়া টাকা শোধ দিতে হবে, অগত্যা নিজের কিডনি বেচে দেন তিনি।
পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, গত বছর জুলাই মাসে পাঁচ লক্ষ টাকায় নিজের কিডনি বিক্রি করেছেন। তা থেকে বাড়িতে দুই লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে দেন। কিডনি বিক্রির বাকি টাকাও অনলাইন গেমে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এরপর টাকার জোগান না থাকায় তিনি নানাভাবে প্রতারণা করতেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, দু’দিন আগেই বহরমপুরের এক ব্যক্তির মোবাইলের সিমকার্ড এবং এটিএম কার্ড হাতিয়ে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। সেই ঘটনার অভিযোগ পেয়ে শনিবার অভিযুক্ত যুবককে বহরমপুর থানার পুলিস গ্রেপ্তার করেছে।
ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি) সুশান্ত রাজবংশী বলেন, পুলিস জানিয়েছে, প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রৌশান প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। ধৃতকে রবিবার জেলা আদালতে তোলা হয়। অনলাইনে গেম খেলার কারণে নিজের কিডনি বিক্রি করেছেন বলেও জানিয়েছেন। সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিন আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় রৌশান জানিয়েছেন, কিছুতেই অনলাইন গেম থেকে নিজেকে সরাতে পারছিলাম না। ক্যাসিনো খেলে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছিলাম। সব টাকা হেরেও গিয়েছি। বাড়িতে দাদার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেই টাকা শোধ করতে পারছিলাম না বলে একদিন ঝামেলা হয়েছিল। দাদার উপরে রাগ করে গিয়ে নিজের কিডনি বিক্রি করেছিলাম।