নিজস্ব প্রতিনিধি, শালবনী: মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শালবনী সুপার স্পেশালিটি ব্যবস্থা করেছিলেন অ্যাম্বুলেন্সের। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সেই অ্যাম্বুলেন্সের আর কোনও অস্তিত্বই নেই। যেন রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি। এই অভিযোগ করেছেন রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ। এই ঘটনা সামনে আসতেই বেশ শোরগোল পড়ে যায়। তবে শুধু অ্যাম্বুলেন্স নয়, হাসপাতালের নানা বিষয় নিয়েও সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন শালবনী এলাকার তৃণমূল নেতা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নতুন অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, কিছুদিন বাদেই তার জায়গায় একটি পুরনো অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়। এরফলে রোগীদের প্রয়োজনে পুরনো একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্সই ব্যবহার হয়।
সন্দীপবাবু অভিযোগে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ২৭মে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এলাকার বাসিন্দারা একটি অ্যাম্বুলেন্সের দাবি জানান। সমস্যার কথা শোনামাত্র মুখ্যমন্ত্রী অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, এখন তার কোনও অস্তিত্ব নেই। এছাড়া, শালবনী হাসপাতালে থাকা ডায়ালিসিস মেশিনেরও কোনও খোঁজ নেই। সেই মেশিন অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অপরদিকে, একটি বেসরকারি সংস্থা শালবনী হাসপাতালে বিপুল পরিমাণে যন্ত্রাংশ ও কম্পিউটার দিয়েছিল। সেগুলিরও কোনও খোঁজ নেই। আবার, হাসপাতাল থেকে ইউএসজি মেশিন সরিয়ে বেলদায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপরে তো এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়বেই।
সিএমওএইচ সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি ট্রান্সপোর্ট বিভাগ দেখে। তবে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে। প্রয়োজন অনুসারে শালবনী থেকে বেশকিছু যন্ত্রাংশ স্থানান্তরিত করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, মানুষ যাতে পরিষেবা পায়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে যদি কিছু চুরি হয়ে থাকে, তবে তদন্ত কমিটি করা হবে। সেক্ষেত্রে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, একসময় জেলায় মাওবাদী আন্দোলনের প্রভাবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছিল। হাসপাতালে সঠিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা মিলত না। ২০১২ সালের পর থেকে ক্রমশ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। আগের চেয়ে চিকিৎসা পরিষেবাও উন্নত হয়। আগে শালবনী এলাকায় গ্রামীণ হাসপাতাল ছিল। সেখানকার পরিকাঠামো ছিল খুবই নিম্নমানের। এরফলে গুরুতর কোনও রোগে আক্রান্ত হলে বা জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে রোগীকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৈরি হয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। ঢেলে সাজানো হয় হাসপাতালের পরিকাঠামো। এমনকী, হাসপাতালেই আইসিইউ ইউনিট চালু হওয়ায় উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জানা গিয়েছে, এই হাসপাতাল থেকে গত বছর শুধু ১১ হাজারের বেশি মানুষ এক্স-রে পরিষেবা পেয়েছেন। কিন্তু, এরপরেও বেশকিছু খামতি প্রকাশ্যে এসেছে।
শালবনী এলাকার বাসিন্দা কৌশিক দে বলেন, আগে থেকে হাসপাতালের মানের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের গাফিলতির জন্য পরিষেবা খুবই নিম্নমানের। এছাড়া, রোগীদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করা হয়।
রবিবার সন্দীপবাবু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের জন্য কী করেননি। তিনি সমস্ত পরিকাঠামোযুক্ত শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। মানুষ ঠিকমতো পরিষেবা পান না। মুখ্যমন্ত্রী অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেটির কোনও খোঁজই নেই।-নিজস্ব চিত্র