সংবাদদাতা, বোলপুর: প্রচুর মদ খেয়েছি। লড়তে লাড়ছি (নড়তে পারছি না)। আমাকে বাড়ি দিয়ে আয়। এই আবদার যাকে তাকে নয়, পুলিসকে। তাও আবার চলন্ত গাড়ি থামিয়ে। প্রথমে বিষয়টি পাত্তা দিতে চাইনি পুলিস। কিন্তু, মাতাল বৃদ্ধও নাছোড়বান্দা। বেগতিক দেখে পুলিস নেমে এসে, তাঁকে বুঝিয়ে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করে। কিন্তু, কোনও ফল হয়নি। এরপর নেশা কাটাতে তাঁকে চা-ও খাওয়ানো হয়। কিন্তু, তাতেও সে ভুলতে রাজি হয়নি। দাবি পূরণ করতেই হবে, গাড়ির সামনে একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এভাবেই সময় অতিক্রান্ত হতে দেখে অবশেষে তাঁর আবদার পূরণ করে পুলিস। এই ঘটনায় মাতালের কার্যকলাপ দেখে হেসেই খুন পুলিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনার সূত্রপাত পাড়ুই থানার অন্তর্গত হেদাডাঙা গ্রামের বৃদ্ধকে নিয়ে। দিন কয়েক আগে ভগ্নিপতির মৃত্যু হওয়ায় শনিবার সকালে বোলপুর সংলগ্ন মনোহরপুর আদিবাসীপাড়ায় বোনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বিকালে ফেরার পথেই ঘটে বিপত্তি। পেটে একটু কারণ পড়লে ভালো হয়, এই আকাঙ্ক্ষায় পাড়ুইয়ের একটি দোকানে ঢুকে ওই বৃদ্ধ একটু বেশি পরিমানেই মদ্যপান করেন।
প্রথমটায় নেশার ঘোরে না বুঝলেও, মদের দোকান থেকে কিছুটা হেঁটে বল্লভপুর ব্রিজ পেরতেই তাঁর মাথা ঝিমঝিম, পা টলমল করতে শুরু করে। এরপরই শুরু হয় আসল নাটক। কীভাবে বাড়ি ফিরবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। তখনই তিনি দেখতে পান তার দিকেই একটি গাড়ি আসছে। সাধারণত পুলিস ভ্যান দেখলে সবাই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখানে ঘটলো নজিরবিহীন ঘটনা। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পুলিসের গাড়ি থামান ওই বৃদ্ধ। গাড়িটি তাঁর সামনে থামতেই ভিতরে থাকা পাড়ুই থানার অফিসার সুব্রত অধিকারীকে গিয়ে ধরেন। একটাই দাবি, প্রচুর মদ খেয়েছি। লড়তে লাড়ছি। আমাকে বাড়ি দিয়ে আয়। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সুব্রতবাবু প্রথমে তাঁকে একটি স্থানীয় দোকানে চা খাওয়ান। যদি নেশা কাটে। কিন্তু, তারপরেও পুলিসের গাড়ি ছাড়তে চাননি ওই বৃদ্ধ। তাই অগত্যা দেরি না করে, গাড়িতে তুলে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিস। ওই মাতাল বৃদ্ধের কাণ্ডকারখানা দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা হাসিতে ফেটে পড়েন।
বাড়ি পৌঁছেই খাটিয়ায় শুয়ে বৃদ্ধ বলেন, আমি মাঠে ঘাটে খেটে খাওয়া মানুষ। সারাদিন ভেড়া আর গোরু চরাই। দিনের শেষে একটু মদ না হলে চলে না। বোনের বাড়ি গেছিলাম, সেখান থেকে ফেরার পথে মদের দোকান দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিলাম। পরে বুঝলাম, মাথা বেশ ঝিমঝিম করছে। বাড়ি যেতে পারব না। সামনেই পুলিসের গাড়ি দেখে ভাবলাম বলেই দেখি, বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তখন ওই বাবুরা আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিল। ভাগ্যিস বলেছিলাম, না বললে আর বাড়ি ফিরতে পারতাম না।