• পদ্মের প্রতীকে কলাগাছও জেতাতে হবে! সরব সুকান্ত
    এই সময় | ০২ জুন ২০২৫
  • এই সময়: যে মঞ্চ থেকে তৃণমূল সরকারের ‘এক্সপায়ারি ডেট’ ভরপুর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সেই একই মঞ্চ থেকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ভাষণে ইঙ্গিত মিলল, আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকা দলের সাধারণ নেতা–কর্মীদের অনেকেরই মনপসন্দ না–ও হতে পারে!

    রবিবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোরে বিজেপির কর্মিসভায় অংশ নেন অমিত শাহ। দলের রাজ্য, জেলা এবং মণ্ডল স্তরের নেতাদের ভোট–যুদ্ধে নামার আহ্বান জানিয়ে শাহ বলেন, ‘ছাব্বিশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকাকে মূল সমেত উপড়ে ফেল দেব। আর এক বছর যা বিরোধিতার করার তৃণমূল করে নিক। কারণ, তারপর আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না। ছাব্বিশে বাংলায় বিজেপির সরকার হবে।’ এমনকী, আগামী বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামানত জব্দ হবে বলেও দাবি করেছেন শাহ।

    শাহের এই আত্মবিশ্বাসের কতটা বঙ্গের বিজেপি নেতাদের মধ্যে আদৌ আছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ, ২৬–এর ভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকা দলের কর্মীদের পছন্দ হবে কি না, তা নিয়েই ধন্দে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। নেতাজি ইন্ডোরে এ দিনের কর্মিসভায় সুকান্ত বলেন, ‘প্রার্থী পছন্দ হয়নি, এ সব বলা চলবে না। বিজেপির প্রতীকে কলাগাছ দাঁড়ালেও তাঁকে জেতাতে হবে।’ সূত্রের খবর, প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া বিজেপিতে শুরু হয়ে গিয়েছে। এবং তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চাপা–অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সুকান্তর বক্তব্যে তারই আভাস মিলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

    শাহ এ দিন আগামী বিধানসভা ভোটে বঙ্গ–বিজেপিকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এ দিন নেতাজি ইন্ডোরেই অনৈক্যের ছবি ধরা পড়েছে। কর্মিসভায় গরহাজির ছিলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেই বিজেপি সূত্রে খবর। শুধু দিলীপ নন, তাঁর ঘনিষ্ঠ অনেককেই এ দিন দেখা যায়নি শাহের কর্মিসভায়।

    বঙ্গ–বিজেপি বিধানসভা ভোটের আগে ঐক্যবদ্ধ হবে কি না, সেটা সময়েই বলবে। কিন্তু শাহ এ দিনের সভা থেকে বাংলার বিজেপি নেতাদের নির্বাচনী ইস্যুগুলি বাতলে দিয়ে গিয়েছেন। ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলা ছাড়াও মুর্শিদাবাদ, মালদার অশান্তির ঘটনায় তিনি জোর দিয়েছেন। সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন।

    এ বার মুর্শিদাবাদ নিয়ে শাহ বললেন, ‘তৃণমূল নেতা মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়ে থেকে দাঙ্গায় মদত দিয়েছেন। এটা স্টেট স্পনসরড দাঙ্গা। বাংলায় হিন্দুদের পুজো করতে দেওয়া হয় না।’ জবাবে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ভয়াবহতম দাঙ্গা গুজরাটে হয়েছিল অমিত শাহের নেতৃত্বে।’ শাহের কাছে তাঁর আহ্বা‍ন, ‘বাংলায় হিন্দু উৎসব কী ভাবে জানতে হলে পুজোর সময়ে এসে ঘুরে যান।’

    এ দিন ভোট সন্ত্রাস নিয়েও তৃণমূ‍লকে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘গোটা দেশে নির্বাচনী সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু বাংলায় হয়‍নি। ২০২১–এর বিধানসভা ভোটের পর আমাদের শতাধিক কর্মী খুন হয়েছেন। কিন্তু সে দিন ফুরিয়েছে। বাং‍লায় স্বচ্ছ এবং অবাধ ভোট হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও জামানত জব্দ হবে।’ শাহের দাবি, ‘২৬–এ বিজেপি সরকার আসার পর বিজেপি কর্মীদের খুনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ নির্বাচনী সন্ত্রাস সংক্রান্ত শাহের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচন তো পরিচালনা করে আপনাদের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। রিগিং হলে সেটা তাঁদের ব্যর্থতা।’

  • Link to this news (এই সময়)