সুনন্দ ঘোষ
ওসি ড্রোন বলে কলকাতা পুলিশের একটি পদ রয়েছে। পুলিশের কাছে যত ড্রোন রয়েছে, তাদের দেখভাল করা, কখন কোথায় সেগুলি ব্যবহার করা হবে, মূলত তা দেখাই তাঁর কাজ। সম্ভবত, বাড়তে চলেছে তাঁর কাছের পরিধি। কারণ, শহরের আকাশে উড়ে বেড়ানো সমস্ত ড্রোনের উপরেই নজরদারি চালাতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। সম্প্রতি ময়দান চত্বরে গোটা ছয়েক ড্রোনকে লো–ফ্লাই করতে দেখা গিয়েছে।
কখনও হেস্টিংস এলাকা, কখনও আবার বন্দর এলাকায় খানিকটা উড়ে তারা হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সেই ড্রোন কারা ওড়ালো বহু চেষ্টাতেও জানা যায়নি। চিন্তিত দেখালো কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মাকে। চিন্তার কারণ বিবিধ। শুধু ভাইটাল ইনস্টলেশনের ছবি তোলাই নয়, আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে তার ক্ষতি করাও সম্ভব। চিন্তা রয়েছে ভিআইপি–দের মুভমেন্ট নিয়েও। ক্ষতি হতে পারে সাধারণ মানুষেরও।
বারুদ ভরে, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তুলনায় কম ক্ষতি করার ক্ষমতা থাকলেও ছোট ড্রোনকে আর অবহেলা করতে নারাজ কলকাতা পুলিশ। তাই ড্রাফট রুল বানাতে বসেছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। এমন অনেক আইপিএস রয়েছেন, যাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এই পেশায় এসেছেন। টেকনিক্যাল দিকগুলি তাঁরা ভালো বোঝেন। মনোজ নিজেও ইঞ্জিনিয়ার। তাঁরাই বসে বানাচ্ছেন নিয়মকানুন।
পুলিশ কমিশনারের কথায়, ‘উদ্দেশ্য একটাই। প্রতিটি ড্রোনকে মনিটর করতে হবে।’ এই মনিটরিংয়ের জন্যই প্রতিটি ড্রোনকেই লাইসেন্স নিতে হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। যে লাইসেন্স প্রতি বছর রিনিউ করতে হবে। জানাতে হবে কে কীসের জন্য ড্রোন ব্যবহার করছেন।
এই ড্রাফট রুল রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে। কারণ, ড্রোনের উপরে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কেন্দ্রের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)–এর। সব পক্ষ একমত হয়ে তবেই তৈরি হবে নিয়ম। কমিশনারের দাবি, কোনও ডিভাইসে জিপিএস থাকলে তাকে নজরদারির আওতায় আনা সম্ভব। যেমন মোবাইল ট্র্যাক করা যায়, তেমনই ড্রোনও ট্র্যাক করা যাবে।
কমিশনার জানাচ্ছেন, প্রতিটি ড্রোনের ভিতরে কিছু ডেটা ঢোকাতে হবে। ডিটেলস। সেই ডেটা থাকবে পুলিশের কাছেও। ড্রোনের মালিক কে, তাঁর কনট্যাক্ট নম্বর, কোন কাজে তিনি ড্রোন ব্যবহার করছেন — সব থাকবে। প্রতিবার ড্রোন ওড়ানোর আগে ফ্লাইট প্ল্যান জমা দিতে হবে। কোথায় উড়বে তা জানাতে হবে।
কোথায় কোথায় ড্রোন উড়তে পারে, কোথায় পারে না, তার নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে ডিজিসিএ–র (গ্রাফিক্স দ্রষ্টব্য)। মনোজ ভার্মার কথায়, 'সমস্ত ড্রোন জিপিএস দ্বারা পরিচালিত। ড্রোনের ভিতরেই রেড, ইয়েলো জ়োনের পরিধি দিয়ে এমন প্রোগ্রামিং করা প্রয়োজন, যাতে রেড জ়োনে ঢুকতে গেলেই জিপিএস জ্যাম হয়ে যাবে। আমরা ভাবছি, প্রয়োজনে ম্যানুফ্যাচারারদের সঙ্গে কথা বলব। ড্রোন তৈরির সময়েই যাতে এই ডেটা আপলোড করা হয়।'
সমস্যা আরও রয়েছে। ঠিক কোনটা রেড, কোনটা গ্রিন জ়োন তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই কারও। না পুলিশ জানে, না যাঁরা ড্রোন ব্যবহার করছেন, তাঁরা জানেন। কমিশনার বলছেন, 'আমাদেরও নির্দিষ্ট ভাবে জানা দরকার। পার্ক স্ট্রিটে কি ড্রোন ওড়ানো যাবে? ময়দানে? সেখানে তো ফোর্ট উইলিয়াম? আশপাশে অনেগুলো ভাইটাল ইনস্টলেশন রয়েছে। সেখানে কী করে অবাধে ড্রোন উড়তে পারে?'
এ ক্ষেত্রে ডিজিসিএ–র গাইডলাইনেও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। কমিশনারের কথায়, সেটা আরও স্পষ্ট করে তৈরি করার প্রয়োজন। এর জন্য ম্যাপিং দরকার। কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ডিভিশন ধরে এই জ়োন ম্যাপিং করা যায় কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছেন পুলিশকর্তারা। কমিশনারের কথায়, 'এই ম্যাপিং হয়ে যাওয়ার পরে কেউ রেড জ়োনে ফ্লাই করলে তার ড্রোন বাজেয়াপ্ত করে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।'