জামাইষষ্ঠীর উপহার! হাঁসফাঁস গরম থেকে রেহাই, ঘোড়ার জন্য এসি রুম আলিপুরের আস্তাবলে
প্রতিদিন | ০২ জুন ২০২৫
অর্ণব আইচ: ওদের শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। ওদের জন্য কখনও কেউ জামাইষষ্ঠী পালন করেনি। তবু রবিবারই ‘ঘরজামাই’দের ‘জামাইষষ্ঠীর উপহার’ দিল কলকাতা পুলিশ। প্রচণ্ড গরমে মাউন্টেড পুলিশের ঘোড়াদের জন্য তৈরি হল ঝাঁ চকচকে নতুন বাতানুকূল ঘর। এসএন ব্যানার্জি রোডের পর এবার আলিপুর বডিগার্ড লাইনের আস্তাবলেও এই সুবিধা দেওয়া হল কলকাতা পুলিশের ঘোড়াবাহিনীর সদস্যদের।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, এস এন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুলিশের মাউন্টেড পুলিশের আস্তাবলে রয়েছে ৩৮টি ঘোড়া। এছাড়াও আলিপুর বডিগার্ড লাইনেও রয়েছে পুলিশের আস্তাবল। সেখানেও বসবাস আরও ২৯টি ঘোড়ার। ২০১১ সালের আগে প্রচণ্ড গরমে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ত পুলিশের ঘোড়ারা। তখন আস্তাবলে শুধু স্ট্যান্ড ফ্যান বসিয়েই ঘোড়াদের ঠান্ডা করার চেষ্টা করা হত। কিন্তু এমনও দেখা যেত যে, গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে পুলিশের ঘোড়ার। ২০১১ সালের পর থেকে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মাউন্টেড পুলিশেরও উন্নতির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করে লালবাজার। তারই ফল হিসাবে ২০১৪ সালে এস এন ব্যানার্জি রোডে মাউন্টেড পুলিশের আস্তাবলে তৈরি করা হয় চারটি বাতানুকূল ঘর বা ব্লক। কোনও ঘোড়া ডিউটির আগে বা ডিউটি চলাকালীন গরমে অসুস্থ বোধ করলে প্রথমেই চিকিৎসকদের পরামর্শে ঘোড়াগুলিকে বাতানুকূল ব্লকে পাঠানো হয়। সেখানেই তাদের চিকিৎসা করা হয়। শরীর ঠান্ডা হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের ঘোড়াগুলি সুস্থ হয়ে ওঠে।
লালবাজার জানিয়েছে, আলিপুর বডিগার্ড লাইনে এখন যে ২৯টি ঘোড়া রয়েছে, সেগুলির সঙ্গে এস এন ব্যানার্জি রোডের আস্তাবলের ঘোড়াগুলির কিছু তফাতও রয়েছে। গরমে ওই আস্তাবলের ঘোড়াগুলি যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়ে, সেজন্য মূল আস্তাবলের ‘দাওয়াই’ প্রয়োগ করলেন পুলিশকর্তারা। তাই আলিপুর বডিগার্ড লাইনেও বাতানুকূল ঘর বা ব্লক তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক পুলিশ আধিকারিক এদিন রসিকতার ছলে বলেন, ‘‘ঘোড়াগুলি যেন আমাদের ঘরজামাই। তাই এদিন তাদের জন্য নতুন বাতানুকূল ঘর চালু হওয়া যেন জামাইষষ্ঠীরই উপহার।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুর বডিগার্ড লাইনে যে ২৯টি ঘোড়া রয়েছে, সেগুলির মধ্যে ৬টি ঘোড়া অবসর গ্রহণ করেছে। সাধারণভাবে একেকটি ঘোড়া ১৮ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে। এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শেই তারা অবসর গ্রহণ করে। অবসর গ্রহণের পর মাউন্টেড পুলিশ তাদের নিজেদের কাছে ওই ঘোড়াগুলিকে রেখে দেয়। ছাড়াও যে ঘোড়াগুলি প্রবীণ বা অবসরগ্রহণের বয়স হয়ে গিয়েছে, তারাও থাকে এই আস্তাবলটিতে। আবার কিছু ঘোড়া, যারা রেসকোর্স থেকে কলকাতা পুলিশে যোগ দিয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণ ও পুলিশের ডিউটিতে অভ্যস্ত করার জন্য এখানে রাখা হয়। এরা ময়দানে কর্তব্যরত ঘোড়াগুলিকে সাহায্য করে। ক্রমে তাদের জায়গা হবে এস এন ব্যানার্জি রোডের আস্তাবলে। এছাড়াও কয়েকটি ‘স্পোর্টস’ ঘোড়াও আলিপুর বডিগার্ড লাইনের আস্তাবলে রয়েছে। এই নতুন বাতানুকূল ঘরে তাদেরও চিকিৎসা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।