সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
হাওড়া স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের আশপাশে দূরপাল্লার রিজার্ভেশন টিকিট করিয়ে দেওয়ার জন্য দালালচক্র একটা সময়ে প্রচণ্ড সক্রিয় ছিল। পুলিশি ধড়পাকড়ের পরে টিকিটের কালোবাজারি কমলেও, এই মুহূর্তে হাওড়া স্টেশনের বাইরে বিকল্প দালালি হিসেবে ট্যাক্সি দালালচক্র এখন বেশ সক্রিয়। আর তা নিয়েই রীতিমতো প্রতিদিন রাতে গণ্ডগোল লেগেই থাকছে।
হাওড়া স্টেশনে ট্রেনে করে যাঁদের রাতে ফেরার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা অনেকেই জানেন, স্টেশনের বাইরে সরকারি ও বেসরকারি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও পার্কিং জ়োনে রাতদুপুরে কী ভাবে ট্যাক্সিভাড়া নিয়ে গণ্ডগোল বাধে। অনেকেই এই ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছেন। হাওড়া স্টেশনের বাইরে গঙ্গার ধারে, আগে ওল্ড কমপ্লেক্স এবং নিউ কমপ্লেক্সের জন্য দু’টি আলাদা আলাদা ট্যাক্সি বুকিং সেন্টার ছিল। সেখানে যাত্রীরা লাইন দিয়ে ট্যাক্সি বুক করতে পারতেন।
পরবর্তী কালে সেই লাইন দেওয়ার ঝামেলা কমাতে রাজ্য সরকার যাত্রীসাথি অ্যাপ নিয়ে আসে। সেখানে মোবাইলের মাধ্যমে সেই অ্যাপ থেকে গাড়ি বুক করা যায়। কিন্তু প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে, গাড়ির সংখ্যা কমতে থাকে রাত বাড়লেই। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এক শ্রেণির ট্যাক্সি দালালচক্রের রমরমা শুরু হয়েছে, যাঁরা ইচ্ছেমতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া দাবি করছেন, তা না দিলেই বাধছে বচসা।
শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার রাতে এই নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে ট্যাক্সি চালক ও দালালচক্রের বচসা বাধে৷ সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। রেলযাত্রীরা জানান, হাওড়া স্টেশন থেকে বেরিয়ে গঙ্গার ধার বরাবর যে গাড়ি পার্কিং জ়োন রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন অ্যাপ ক্যাব ও প্রাইভেট ট্যাক্সি পার্ক করা থাকে। হাওড়া স্টেশন থেকে গঙ্গার ধারে যে গেট রয়েছে, সেখান দিয়ে বেরোলে প্রথমেই এই যাত্রীসাথি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড দেখা যায়।
তাই যাত্রীরা প্রথমে চেষ্টা করেন, সেখান থেকে গাড়ি বুক করার। ফলে, অন্যান্য অ্যাপ ক্যাব বা বেসরকারি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড যেহেতু কিছুটা দূরে, তাই স্টেশনের বাইরেই এই দালালরা দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁরা ‘ট্যাক্সি পাওয়া যাবে’ বলে যাত্রীদের ওই ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে নিয়ে যান। যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার জন্যে যে ভাড়ার কথা বলে আসেন, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি বেরনোর সময়ে দু’তিনশো টাকা পার্কিং ফিজ় দাবি করা হয়। তা না দিলেই যাত্রীদের সঙ্গে বচসা বাধে।
অথচ রেলের টেন্ডার দেওয়া এই পার্কিং জ়োনে গাড়ি পার্কিংয়ের চার্জ ৭১ টাকা। এ ছাড়া, অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করার অভিযোগ তো রয়েইছে। অনেক যাত্রীই এ ভাবে দুর্ভোগের শিকার হন। তাঁরা প্রতিবাদ করতে এলে, অন্য চালক ও দালালরা তাঁদের ঘিরে ধরে হেনস্থা করে। এই নিয়ে বহু বার পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। শুক্রবারের গণ্ডগোলের ঘটনার ভিডিও দেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।