• তিন বছর নিরুদ্দেশ, ‘খেপা’ ছেলেকে ফেরালেন বড়বাবু
    এই সময় | ০২ জুন ২০২৫
  • দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ

    প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন বছর পঁচিশের যুবক জয়ন্ত মালিক। মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন। বাড়ি খানাকুলের রামনগর এলাকায়। হন্যে হয়ে ঘুরেছেন বৃদ্ধ মা। পরিবারের আত্মীয়স্বজনরা অনেক জায়গায় খোঁজ খবর করেও তাঁর খোঁজ পাননি। প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায়। তবু ছেলে বাড়িতে ফেরেননি। হতাশ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ মা। তবে পড়শিদের মাধ্যমে অবশেষে তাঁরা খানাকুল থানার দ্বারস্থ হন।

    নিখোঁজ যুবক জয়ন্তর মায়ের সঙ্গে ভালো ভাবে কথা বলেন খানাকুল থানার ওসি হামিদুর রহমান। মন দিয়ে শুনে নেন গোটা কাহিনিটা ঠিক কী। তাঁদের কাছ থেকে নিখোঁজ যুবকের ছবি নেন ও অন্যান্য বিবরণ শোনেন। ওসি তাঁদের আশ্বস্ত করেন, যেমন করেই হোক, তাঁদের ছেলেকে ফিরিয়ে দেবেন। কিছুটা বিশ্বাস, বেশির ভাগটাই অবিশ্বাস নিয়ে থানা থেকে ফিরেছিলেন জয়ন্তর বৃদ্ধা মা। তাৎক্ষণিক কোনও সুফল মেলেনি।

    পুলিশের আশ্বাসবাণী নিয়ে বাড়ি ফেরার পরেও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করেন। কিন্তু থানা থেকে কোনও উত্তর পাননি তাঁরা। জয়ন্তর পরিবারে সব আশা হারিয়ে যেতে বসেছিল। অন্য দিকে, থানার ওসি হামিদুর রহমান চারধারে শুরু করে দেন লাগাতার তল্লাশি ও খোঁজখবর। অবশেষে বিশেষ মাধ্যম ও গোপন সূত্রকে কাজে লাগিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করে দেন।

    বেশ কিছু দিন এই ভাবেই খোঁজখবর চালিয়ে যান ওসি স্বয়ং। তাঁরই সক্রিয় তদন্তের জেরে শেষমেশ তিনি জানতে পারেন, এই যুবক জয়ন্ত আসামের একটি হাসপাতালে আছেন। সেখান থেকে তাঁকে আনার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয় খানাকুল থানার পক্ষ থেকে। শুক্রবার আসামের ওই হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ জয়ন্ত মালিককে খানাকুল থানায় নিয়ে আসা হয়। এর পরেই তাঁর মা ও আত্মীয়স্বজনকে খবর দেওয়া হয় যে, তাঁদের সন্তানকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

    খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান জয়ন্তর বৃদ্ধা মা–সহ অন্যান্য আত্মীয়রা। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে নিজের সন্তানকে কাছে পেয়ে পুলিশের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন মা। থানায় তাঁর হাতে যাবতীয় খাবারদাবার–সহ অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস তুলে দেওয়া হয়। তাতে ভীষণ খুশি জয়ন্তর মা। এ দিন থানায় জয়ন্তকে সমস্ত আইন–কানুন, রীতিনীতি মেনেই তুলে দেওয়া হয় তাঁর মায়ের হাতে। আনন্দে, আবেগে আপ্লুত মায়ের বক্তব্য, ‘কোনও দিনও ভাবিনি, ছেলেকে ফিরে পাবো। খানাকুল থানার বড়বাবুই আমার খেপা ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো ওঁর কাছে।’

  • Link to this news (এই সময়)