বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: পিএফের সুবিধা পান দেশের প্রায় আট কোটি মানুষ। তাঁদের বেতনের একাংশ কেটে জমা করা হয় পিএফ অ্যাকাউন্টে। এরপর সেই টাকা বিভিন্ন বন্ড ও শেয়ারবাজারে লগ্নি করা হয়। এর থেকে যে লাভ আসে, তারই একটি অংশ সুদ হিসেবে পান গ্রাহকরা। সম্প্রতি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন বা ইপিএফও ঘুরপথে স্বীকার করে নিয়েছে, যে ফর্মুলায় পিএফ গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা বাজারে খাটানো হয়, সেখানেই খামতি থেকে যাচ্ছে। ‘ভুল’ জায়গায় টাকা খাটানোর খেসারত দিচ্ছেন কোটি কোটি গ্রাহক। এই অবস্থায় নিয়ম পরিবর্তনের জন্য সম্প্রতি ইপিএফও’র কেন্দ্রীয় অছি পরিষদের বৈঠকে কিছু প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এখন অর্থমন্ত্রক ছাড়পত্র দিলেই গ্রাহকের জমানো টাকা বিনিয়োগের নিয়মে বদল আনবে ইপিএফও।
বর্তমান নিয়মে কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে? দপ্তরের কর্তারা বলছেন, গ্রাহকের থেকে যে টাকা নেওয়া হয়, নিয়ম অনুযায়ী তার অন্তত ২০ শতাংশ খাটাতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার তরফে বাজারে ছাড়া বন্ডে। এক্ষেত্রে লগ্নির সর্বোচ্চ সীমা ৪৫ শতাংশ। কিন্তু ৪৫ শতাংশ তো দূরের কথা, ২০ শতাংশ টাকা খাটানোর মতো বন্ডই বাজারে মেলে না। হন্যে হয়ে ওই বন্ড খুঁজতে হয় লগ্নিতে সাহায্যকারী সংস্থা বা পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের। বন্ড মিললেও তার সুদের হার আবার খুবই কম। এমনকী, রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক বন্ডের চেয়েও কম সুদ মেলে এক্ষেত্রে। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি এখন মূলধন জোগাড় করতে বাজারে বন্ড ছাড়ার পরিবর্তে অন্য কোনও উপায় খুঁজে নেয়। তাই এই ধরনের বন্ড এখন কম পাওয়া যায়। এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে অছি পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বন্ডে ন্যূনতম ২০ শতাংশ লগ্নির নিয়ম বদল করে ১০ শতাংশ করতে হবে। তাহলে ‘গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ’ বা সরকারি লগ্নিপত্রে আরও বেশি বিনিয়োগের রাস্তা খুলে যাবে। বর্তমানে সরকারি লগ্নিপত্রে সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যেত। ওই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
‘এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড’ বা ইটিএফের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা শেয়ারবাজারে লগ্নি করে ইপিএফও। এক্ষেত্রে গ্রাহকের টাকার সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ লগ্নি করা যায়। দপ্তরের কর্তাদের মতে, এই লগ্নিতেই সবচেয়ে বেশি লাভ বা ‘রিটার্ন’ মেলে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই ফান্ড একবার ভাঙিয়ে সেই থোক টাকার পুরোটাই ফের ইটিএফে খাটানো হচ্ছে না। বড় অংশ চলে যাচ্ছে বন্ড ও অন্যান্য খাতে। ফলে ইটিএফে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ টাকা খাটানোর সুযোগ থাকলেও বাস্তবে তা ১০ শতাংশের বেশি হচ্ছে না। বলাই বাহুল্য যে এর ফলে ‘রিটার্ন’ কম মিলছে। তাই অছি পরিষদের প্রস্তাব, ইটিএফ ভাঙানোর পর পুরো টাকাই ফের সেখানে বিনিয়োগ করা হোক। ইটিএফে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রস্তাব বিবেচনার আবেদন করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে পিএফ কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় অছি পরিষদের সদস্য তথা টিউসিসি’র সাধারণ সম্পাদক এস পি তেওয়ারি বলেন, ‘বৈঠকে আমরা ইটিএফে বিনিয়োগের হার বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। কারণ, শেয়ারবাজারের লগ্নিতেই সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসে। এই হার বাড়লে গ্রাহকদের ৮.৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়া সম্ভব হবে।’