বলিউড থ্রিলারকে হার মানানো হত্যাকাণ্ড। মালদা থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে নির্মীয়মাণ বাড়িতে ডেকে ভাইপো সাদ্দাম নাদাপকে (৩৬) খুনের অভিযোগ কাকিমা মৌমিতা হাসানের বিরুদ্ধে। ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
খুনের পিছনে ‘পরকীয়া’-র বিষয় কোনও কোনও মহলে উঠে এলেও, ধৃত অন্তত সংবাদমাধ্যমের সামনে সে কথা স্বীকার করছেন না। উল্টে তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা, ব্ল্যাক মেল করা হতো বলে অভিযোগ। যদিও ঠিক কী কারণে তাঁকে হেনস্থা করা হতো, তা পরিষ্কার নয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকা নিয়ে গোলমালের জেরেই এই ঘটনা।
১৫ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে সোমবার উদ্ধার হয় চাঁচল মহকুমার পুখুরিয়া থানার কোকলামারি এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম নাদাপের মৃতদেহ। পুলিশ সূত্রে খবর, রীতিমতো সুপারি কিলার ডেকে খুন করা হয় যুবককে। তার পরে মাংস কাটার ছুরি দিয়ে দেহ কুচিয়ে মেঝেতে পুঁতে প্লাস্টার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মৌমিতা হাসানের দক্ষিণ দিনাজপুরের নির্মীয়মান বাড়ির মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার হয় সাদ্দামের দেহের টুকরো। প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় ও পুলিশের একটি সূত্রে খবর, কাকিমার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল সাদ্দামের। পরকীয়া ও টাকা পয়সার টানাপড়েনে এই খুন।
ক্যামেরার সামনে খুনের বিষয়টি অভিযুক্ত স্বীকার করলেও পরকীয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ধৃত। তাঁর দাবি, বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। মৌমিতা বলেন, ‘ওঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমাকে ব্ল্যাকমেল করত। ভয় দেখাত। যা করেছি বাধ্য হয়ে করেছি।’ এখানেই শেষ নয়, অভিযুক্ত মৌমিতার দাবি, ‘পরকীয়া নয় বরং শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাঁকে হেনস্থা করেছেন সাদ্দাম।’
অভিযুক্ত বলেন, ‘একজন মহিলাকে শারীরিক, মানসিক যত ভাবে হেনস্থা করা যায়, ও তাই করেছে আমার সঙ্গে। ওর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। শুধু আমাকে ব্ল্যাকমেল করত।’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার সিহুর গ্রামের বাসিন্দা বসির মণ্ডল। তাঁর মেয়ে মৌমিতা হাসান ওরফে রানি। গত কয়েক বছর আগে মালদা জেলার পুকুরিয়ার নাদাপ পাড়ার বাসিন্দার পেশায় হাইস্কুল শিক্ষক রহমান নাদাপের সঙ্গে মৌমিতার বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের দুই ছেলে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজবাজারের বাপুজি কলোনিতে স্বামী সন্তানকে নিয়ে থাকেন মৌমিতা হাসান। সম্পর্কে সাদ্দামের কাকিমা তিনি। বাপুজি কলোনির বাড়ির একতলা ভাড়া নিয়ে অফিস ঘর চালাতেন সাদ্দাম। অভিযোগ, সাদ্দাম বেশ কিছু ধরে তাঁর কাকিমা মৌমিতাকে প্রেম-সহ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। সেই থেকেই শুরু সমস্যা।
জানা গিয়েছে, গত ১৮ মে মৌমিতা তপনের সিহুর বালকাহারা গ্রামে তাঁর বাপের বাড়িতে সাদ্দামকে ডেকে আনে। সেখানে মৌমিতা সাদ্দামকে কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ।
তদন্তে নেমে ৩১ মে মৌমিতাকে আটক করে ইংরেজ বাজার থানার পুলিশ। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশের জেরায় মৌমিতা ভেঙে পড়ে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় দাবি। পরে তাঁকে জেরা করেই সবটা জানা যায়। গ্রেপ্তার হন তিনি।
মৃতের ভাই লাদেন নাদাপ অভিযোগ করেছেন টাকা নিয়ে ঝামেলা চলছিল মৌমিতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার দাদা ভিনরাজ্য-সহ বিভিন্ন জায়গায় ঠিকাদারির কাজের জন্য লেবার পাঠাত। ঠিকাদারির কোষাধ্যক্ষ ছিল কাকিমা মৌমিতা হাসান। কিন্তু অনেক টাকার হিসাব দিচ্ছিল না।’ এই কারণেও খুন করা হতে পারে বলে সাদ্দামের পরিবারের অভিযোগ। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।