কী হয়েছে আপনার? অনুব্রতের জবাব এল: গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর! ভাবছি কোভিড পজ়িটিভ কি না কাল পরীক্ষা করিয়ে নেব
আনন্দবাজার | ০২ জুন ২০২৫
তিনি অসুস্থ বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে হুমকি এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ কাণ্ডে পর পর দু’দিন পুলিশি তলব এড়িয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু কেষ্ট মণ্ডলের ঠিক কী হয়েছে? ঠিক কী সমস্যা তাঁর? এ নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমে সোমবার সন্ধ্যায় একাধিক দাবি করলেন কেষ্ট।
অনুব্রত বলেন, ‘‘আমার গলায় খুব ব্যথা। জ্বরও রয়েছে। খুব কাশছি। নাক দিয়ে জল গড়াচ্ছে।’’ মূল সমস্যা কী? অনুব্রত বললেন, ‘‘গলার ব্যথাটাই ভোগাচ্ছে।’’ অনুব্রত যে যে উপসর্গের কথা বলেছেন, তাতে কোভিডের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখন আবার কোভিড বাড়তে শুরু করেছে। দেশের মধ্যে দিল্লি এবং বাংলাতেই কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। অনুব্রত কি কোভিড পরীক্ষা করাবেন? কেষ্ট বললেন, ‘‘ভাবছি কালকে (মঙ্গলবার) কোভিড টেস্ট করিয়ে নেব।’’
তার পরে আর কথা বাড়াতে চাননি। নিজেই বললেন, ‘‘রাখছি! বেশি কথা বললে গলায় লাগছে।’’ বলে দু’বার কেশে কেটে দিলেন ফোন।
অনুব্রতের অসুস্থতা এবং চিকিৎসকের সেই সংক্রান্ত শংসাপত্র নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, অনুব্রতের যে মেডিক্যাল রিপোর্ট তদন্তকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেটি শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের। ওই মেডিক্যাল রিপোর্টে সই রয়েছে হিটলার চৌধুরী নামে এক চিকিৎসকের। ঘটনাচক্রে, রামপুরহাট ১-এর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের (বিএমওএইচ) নামও হিটলার চৌধুরী। বিতর্ক তা নিয়েই। প্রশ্ন উঠেছে, বিএমওএইচ পদে থাকা সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখছেন এবং মেডিক্যাল রিপোর্টও তৈরি করে দিচ্ছেন? তা হলে অনুব্রতের মেডিক্যাল রিপোর্ট কি ‘অবৈধ’? সোমবার অনুব্রত অবশ্য সে সব নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি। তার আগেই গলায় ব্যথা বলে ফোন রেখে দেন।
তবে অনুব্রতের মেডিক্যাল রিপোর্টে সই থাকা চিকিৎসক এবং রামপুরহাট ১-এর বিএমওএইচ একই ব্যক্তি কি না, সে বিষয়ে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিএমওএইচ হিটলারের বাড়ি মল্লারপুরে। সূত্রের খবর, চিনের একটি কলেজ থেকে মেডিক্যাল পাশ করেছিলেন তিনি। সই নিয়ে বিতর্কের পর তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। যদিও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের কর্ণধার মলয় পিট বলেন, ‘‘বাইরে আছি। কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ এই মলয় আবার অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলেই জেলায় পরিচিত।
বীরভূমের মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শোভন দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘কে কোথায় সই করেছে, আমি জানি না। আমার কাছে রিপোর্টও নেই। তবে সরকারি পদে থাকা কোনও ডাক্তারই এ ভাবে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতে পারেন না। ভবিষ্যতে যদি আমার কাছে রিপোর্ট জমা পড়ে, আমি বিষয়টি দেখব।’’
গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুব্রতের অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়। শুক্রবার সকালে অনুব্রত আনন্দবাজার ডট কমে দাবি করেছিলেন, ওই কণ্ঠস্বর তাঁর নয়। কিন্তু দলের চাপে বিকেলেই তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হয়। যার ফলে এক প্রকার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে অনুব্রতই ওই ফোন করেছিলেন। তার পর শনি ও রবিবার তাঁকে পুলিশ নোটিস পাঠিয়ে হাজিরা দিতে বলেছিল। শনিবার তিনি এসডিপিও দফতরে না-গেলেও পার্টি অফিসে গিয়েছিলেন। রবিবার থেকে অবশ্য তিনি গৃহবন্দি।
অতীতে সিবিআই তলবে যাওয়ার সময়ে অনুব্রতের পিজি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রাজ্য রাজনীতিতে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। বীরভূম পুলিশ ডাকতেই তিনি ফের অসুস্থ বোধ করছেন। তাঁর দাবি, গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর, নাক দিয়ে জল গড়াচ্ছে। ভাবছেন মঙ্গলবার কোভিডের পরীক্ষাও করাবেন।