আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোবাইল ফোনে অনলাইন গেমে আসক্তির জেরে বহরমপুরের একটি মেসবাড়ি থেকে রুমমেটের লক্ষাধিক টাকা চুরি করে গ্রেপ্তার হলেন বছর বাইশের এক যুবক। পুলিশি জেরায় ওই যুবক জানিয়েছেন অনলাইন গেমের নেশায় টাকা জোগাড় করার জন্য প্রায় ১ বছর আগে নিজের একটি কিডনিও বিক্রি করে দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ধৃত ওই যুবকের নাম রওশন জামান। তার বাড়ি ভগবানগোলা থানা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২০–২১ সালে করোনা যখন অতিমারি চেহারা নিয়েছিল সেই সময় থেকেই রওশন মোবাইল ফোনে অনলাইন গেম খেলার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। রওশনের পরিবার ভগবানগোলা থানা এলাকায় সম্ভ্রান্ত এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ সূত্রে খবর, রওশনের মোবাইল ফোনে একাধিক অনলাইন গেমের অ্যাপ রয়েছে। ওই মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশনগুলো দিয়ে সে দিনভর বিভিন্ন অনলাইন বেটিং গেম খেলে থাকে। একাধিকবার রওশন বেটিং করে টাকা জিতলে বেশিরভাগ সময় সে বিপুল পরিমাণ টাকা হারিয়েছে অনলাইন গেমের নেশায়। রওশনের এই নেশার কথা পরিবারের লোকেরাও জানে। বাড়ির লোক গেম খেলতে বারণ করার জন্য বছরখানেক আগে ওই যুবক বাড়ি ছেড়ে বহরমপুরে মেসবাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করে।
বহরমপুর থানার এক আধিকারিক জানান, গোরাবাজার এলাকায় রওশন যে মেসে থাকত সেখানকার এক আবাসিক মে মাসের শেষ সপ্তাহে একটি লিখিত অভিযোগ করে জানায় রওশন তার পার্স থেকে এটিএম কার্ড হাতিয়ে জালিয়াতি করে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়েছে। ওই যুবকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত করতে নামে এবং শনিবার রওশনকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই পুলিশ রওশনের অনলাইন গেমের প্রতি তার আসক্তির কথা জানতে পারে। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে রওশন বিহারের একটি ঠিকানায় নিজের ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়েছিল। পরে হায়দরাবাদের এক যুবকের সাহায্য নিয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক প্রৌঢ়কে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করে দেয়।
পুলিশের ওই আধিকারিক জানান, এরপর কয়েক ধাপে পাঁচ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ফের একবার রওশন একাধিক অনলাইন গেম খেলতে শুরু করে। সমস্ত টাকা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি যে মেসে থাকছিল সেখানকার এক আবাসিকের মানিব্যাগ হাতিয়ে সেখান থেকে এটিএম কার্ড চুরি করে। বহরমপুর থানার ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, রওশনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেআইনি কিডনি পাচার চক্রেরও হদিস পাওয়া গিয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে কারা জড়িয়ে রয়েছে এবং কীভাবে তারা কাজ করছে পুলিশ সে বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে।