শনিবারের পর রবিবারও পুলিশের তলব এড়িয়ে গিয়েছেন। দুইবার পুলিশের হাজিরা এড়িয়ে এবার আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন বীরভূমের একসময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে কদর্য ও নোংরা গালমন্দ করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি ধারায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে দুইটি জামিন অযোগ্য ধারাও রয়েছে।
যদিও রবিবার অনুব্রতর আইনজীবী পুলিশি হাজিরা এড়ানো প্রসঙ্গে দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেল গুরুতর অসুস্থ। সে কথা তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছি। তাঁর একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাঁর। নানা রোগের ওষুধও খান। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অন্তত পাঁচদিন বিশ্রাম প্রয়োজন। এব্যাপারে সরকারি হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটও জমা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ভাইরাল-অডিও ক্লিপকাণ্ডটিকে সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টির মধ্যে অনুব্রতকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হয়েছে ওই আইনজীবী দাবি করেছেন।
অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। প্রথমে বিজেপি, পরে বামফ্রন্টও তাঁর গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল ও বিক্ষোভ দেখায় বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে। আইসিকে গালমন্দ করার অডিও যেভাবে প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পুলিশের একাংশও। অনুব্রত মণ্ডল বোলপুর থানার আইসি-কে যে কদর্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন, তাতে পুলিশের সম্ভ্রম ও মর্যাদাহানি হয়েছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অনুব্রত তাঁর হুমকি ফোনে বোলপুরের আইসি লিটন হালদারকে পুলিশ কোয়ার্টার থেকে টেনে বের করে হেনস্থা করার হুমকিও দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ওই আইসি-র মা ও স্ত্রীর মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে হাজিরা এড়ানোয় অনুব্রতর বিরুদ্ধে পুলিশ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে কিনা তা নিয়েও জল্পনা বাড়ছে রাজনৈতিক মহলে। পুলিশ তাদের সম্ভ্রম ও মর্যাদা রাখতে কী ব্যবস্থা নেয় মানুষ সেটাই দেখতে চাইছে।
প্রসঙ্গত বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, এভাবে পুলিশ যদি তার সম্ভ্রম ও মর্যাদা হারিয়ে ফেলে, তাহলে আগামী দিনে তাদের কর্তৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে। কারণ অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারাও আগামীদিনে গালমন্দ ও হুমকি দিয়েও ক্ষমা চেয়ে নেবেন। এভাবে তাঁরা পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। পুলিশের প্রতি আস্থা ও বাহিনীর কর্তৃত্বের প্রশ্নে তা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করতে পারে। সুতরাং পুলিশেরই এখন মানুষকে বোঝানোর দায় রয়েছে যে তাদের কর্তৃত্ব লঘু হয়নি। আগামী দিনে আর কেউ যেন কোনও পুলিশ ফোন করে এরকম গালমন্দ করার সাহস না পান, সেই দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে তাদেরই।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুব্রতকে আরও একবার নোটিস দেওয়া হতে পারে। তৃতীয়বার হাজিরা এড়ালে তাঁর ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। অনুব্রত বিপাকে পড়লে বরাবরই এভাবে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। তাঁকে পুলিশের একাংশ সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, অনুব্রত বোলপুর থানার আইসিকে যে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিয়েছেন সেটা সাধারণ মানুষ করলে পুলিশ তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করতো। হাজিরা দেওয়ার জন্য ন্যূনতম সুযোগটুকুও দিত না।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুব্রত এই ধরনের কথা এই প্রথম বলছেন না। এবার তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ ঠিক কী পদক্ষেপ নেয় এখন সেটাই দেখার।