• ‘বেড রেস্টে’র পরামর্শ, অথচ উল্লেখ নেই রোগের! কেষ্টর মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ঘিরে জটিলতা
    প্রতিদিন | ০৩ জুন ২০২৫
  • নন্দন দত্ত, সিউড়ি: অনুব্রত মণ্ডলের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ঘিরে বাড়ছে জটিলতা! মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে পুলিশি তলব এড়িয়েছেন কেষ্ট। কিন্তু সেই সার্টিফিকেটেই নাকি গলদ! সেখানে লেখা, অনুব্রত অসুস্থ। পাঁচদিন ‘বেড রেস্টে’র পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর কী রোগ হয়েছে, তা স্পষ্ট করা নেই মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে। যা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করা চিকিৎসকের পরিচয় ঘিরেও জটিলতা তৈরি হয়েছে।

    বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছে ‘বীরভূমের বাঘে’র বিরুদ্ধে। দু’জনের কথোপকথনের সেই অডিও ভাইরাল হতেই শুরু হয় শোরগোল। সেই অডিওর ভিত্তিতে অনুব্রতর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। ২টি জামিন অযোগ্য-সহ মোট চারটি ধারায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। রবিবার সকাল ১১টায় শান্তিনিকেতন থানায় অনুব্রতকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁর বদলে মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের অফিসে আসেন তাঁর আইনজীবী বিপদতারণ ভট্টাচার্য। পুলিশের কাছে একটি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা করে যান। অথচ অনুব্রতকে কেউ হাসপাতালে যেতে দেখেননি। বা কোনও চিকিৎসককে তাঁর বাড়িতে আসতেও দেখেননি। ফলে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট কীভাবে তৈরি হল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই সূত্রে ধরে যে হাসপাতাল থেকে কেষ্টর মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে, তার দুই প্রতিনিধিকে তলব করেছিল এসডিপিও অফিসে। সেখানে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলেও দাবি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অনুব্রতর একাধিক রোগ রয়েছে। সিওপিডি, হৃদরোগের মতো হাজারো অসুখে ভুগছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্রামের পরামর্শ স্বাভাবিক। কিন্তু কী কারণে ‘বেড রেস্টে’র সুপারিশ, তা উল্লেখ থাকাই স্বাভাবিক ছিল। 

    সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেছেন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসক এইচ চৌধুরী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি নাকি আবার বিএমওএইচ অর্থাৎ সরকারি মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকও। আবার বেসরকারি হাসপাতালের মালিক মলয় পীট। এই মলয় পীটকে গরু পাচার মামলায় বারবার তলব করেছে সিবিআই। তাঁর শান্তিনিকেতন ট্রাস্টে অনুব্রতর যোগও তদন্তকারীদের স্ক্যানারে ছিল। এদিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মলয় জানান, “রাজ্যের বাইরে আছি। বিষয়টি শুনেছি। গিয়ে দেখব। তবে কোন ডাক্তার কাকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ইস্যু করছেন, সব কিছু তো জানা সম্ভব নয়। তবে আমি ফেরার পরে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখব।”

    তবে অনুব্রতর এই অসুস্থতার দোহাই দিয়ে হাজিরা এড়ানো নতুন নয় বলেই দাবি বিরোধীদের। গরু পাচারের তদন্ত চলাকালীন তাঁর বাড়িতে গিয়ে চেকআপ করেন বোলপুর হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। তারপরই কার্যত বোমা ফাটিয়েছিলেন। প্রথমে তাঁকে পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, অনুব্রত মণ্ডলের বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আপাতত বিশ্রামে থাকা দরকার তাঁর। ১৪ দিন বেড রেস্টও লিখে দেন। কিন্তু এসএসকেমের তরফে জানানো হয়েছিল, ক্রনিক সমস্যা থাকলেও ভরতির প্রয়োজন নেই। ফলে দুই চিকিৎসকের ভিন্ন মত নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই  বিস্ফোরক মন্তব্য করেন চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। তিনি জানান, বোলপুর হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু তাঁকে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি গিয়ে চিকিৎসার নিদের্শ দিয়েছিলেন। এমনকী হাসপাতালের প্যাডও দেওয়া হয়নি। সাদা কাগজেই যাবতীয় পরামর্শ লিখে দিয়ে আসেন চিকিৎসক। ডা. অধিকারী সাফ জানান, অনুব্রত মণ্ডলই তাঁকে বলেছিলেন বেড রেস্ট লিখতে। যেহেতু বোলপুরেই থাকেন, তাই অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশ অমান্য করার সাহস তাঁর হয়নি। বর্তমান মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে বিতর্কের মাঝেই অনেকেই পুরনো সেই স্মৃতি তুলে আনছেন। 
  • Link to this news (প্রতিদিন)