বাড়িতে আনাগোনা কাদের? মৌমিতার সঙ্গে কারা, প্রশ্ন
বর্তমান | ০৩ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, বালুরঘাট ও তপন: কাকপক্ষী ছাড়া সাতদিন বাড়িতে কাউকে দেখা যায়নি। তারপরেই যে এমন নৃশংস কাণ্ড সামনে আসবে কে ভেবেছিল! তপনের চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিহুর গ্রামের বাসিন্দা মৌমিতা বাপের বাড়িতে ভাশুরপোকে ডেকে খুনের পর থেকেই তালাবন্দি ছিল বাড়ি। গত সাতদিন খোঁজ নেই খুনী মৌমিতা হাসানের বাবা ও মায়ের। স্বভাবতই উঠছে বিভিন্ন প্রশ্ন।
প্রতিবেশীদের দাবি,আশেপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রায় ঝামেলা লেগে থাকত মৌমিতার পরিবারের। ফলে কার্যত ‘একঘরে’ হয়ে থাকা ওই পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগও রাখতেন না প্রতিবেশীরা। পুলিস সূত্রে খবর, বধূর বাবা নতুন পাকা বাড়ি করেছেন। সেখানে এখনও কেউ থাকতেন না। পাশেই মাটির বাড়িতে থাকেন মৌমিতার বাবা ও মা। কিন্তু খুনের পর দেহ নতুন বাড়িতে লুকিয়ে দেওয়ার পর থেকেই বেপাত্তা ছিলেন বাবা ও মা। সোমবার ওই বাড়িতেই হাড়হিম করা দৃশ্য দেখে হতবাক প্রতিবেশীরা।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মৌমিতার বাবার নাম বছির হাসান। তাঁর স্ত্রী শেহেনাজ বিবি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। প্রায় ৮ বছর আগে মালদহের পুখুরিয়া থানার রহমান নাদাবের সঙ্গে বিয়ে হয় মৌমিতার। পরবর্তীতে তাঁরা ইংলিশবাজার শহরে থাকতেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ১৬ মে মৌমিতা নিজের বাবার বাড়িতে আসেন। ১৮ মে ভাশুরের ছেলে সাদ্দামকে ডেকে আনেন তিনি। পুলিসের অনুমান, সম্ভবত ওই রাতেই সাদ্দামকে খুন করা হয়। যে ঘরে খুন করে দেহ চাপা দেওয়া হয়েছিল সেটি ধান, চাল রাখার কাজেই ব্যবহার করা হতো। পুলিস ও স্থানীয়দের অনুমান, ঘরের যে জায়গায় দেহ রেখে ইটের গাঁথনি দেওয়া হয়েছিল,রাজমিস্ত্রির সাহায্য ছাড়া সেটা করা অসম্ভব। রাজমিস্ত্রি আনা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে ধন্দে প্রতিবেশীরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশা করতেন না মৌমিতা। তিনি গ্রামে এলে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখাও করতেন না। ফলে স্থানীয়রা ঘটনার কিছুই আঁচ করতে পারেননি। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনার আগে এবং তারপর কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তির দেখা মিলেছিল ওই বাড়িতে।
প্রতিবেশী মিজানুর সরকার ও আমজাদ সরকাররা বলেন,ওই পরিবার তেমনভাবে কারও সঙ্গেই মিশত না। গত কয়েকদিন বাড়িতে কেউ ছিল না। আজ হঠাৎ পুলিস ওই মেয়েকে এনে দেওয়াল কেটে একজনের দেহ উদ্ধার করে। এই পরিবার এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, ভাবতেই পারছি না।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাহুল সর্দার। তাঁর কথায়, ভাবলেই শিউরে উঠছি। পুলিস, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এই ঘটনায় যাতে দোষীরা শাস্তি পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মৃতদেহ উদ্ধারের পর মৌমিতার বাপের বাড়ির সামনে ভিড়। - নিজস্ব চিত্র।