সংবাদদাতা, বোলপুর: বোলপুর থানার আইসিকে গালিগালাজ ও হুমকির ঘটনায় শনি ও রবিবার দু’ দিনই থানায় হাজিরা এড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর আইনজীবী ও ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিনি অসুস্থ, ডাক্তারদের পরামর্শে বিশ্রামে আছেন। সেজন্য হাজিরা দিতে পারেননি। তাঁর সেই ‘পরামর্শদাতা’ ডাক্তারদের এদিন ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে পুলিস সূত্রে খবর। ওই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল খোদ ওই ডাক্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যদিও সরকারি ভাবে পুলিস ডাক্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি স্বীকার করেনি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এদিন জামিন নেননি অনুব্রত। শনি ও রবিবার পুলিসের কাছে হাজিরা এড়ানোয় রাজনৈতিক মহল আন্দাজ করেছিল সোমবার আদালত খুললে অনুব্রত আগাম জামিনের আবেদন করবেন। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে যে যে ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারাও আছে। কিন্তু সব জল্পনা উড়িয়ে এদিন আদালতে তাঁর কোনও আবেদন জমা পড়েনি। দিনভর অনুব্রত নিজের বাসভবনেই কাটিয়েছেন বলে তৃণমূল সুত্রে জানা গিয়েছে।
বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মহকুমা পুলিস। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু দু’ দিনই অসুস্থ বলে হাজিরা এড়িয়ে যান তিনি। বোলপুরের এসডিপিও অফিসে পুলিসকে প্রয়োজনীয় নথি জমা দেন তাঁর আইনজীবী বিপদতারণ ভট্টাচার্য ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা শিক্ষাবন্ধু সেলের রাজ্য সভাপতি দেবব্রত সরকার ওরফে গগন। রবিবার সেই আইনজীবী দাবি করেছিলেন, অনুব্রত মণ্ডল চক্রান্তের শিকার। একইভাবে গগন সরকার জানিয়েছিলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাজে লাগিয়ে অনুব্রতকে ফাঁসানো হয়েছে। ওই ধরনের কোনও ফোন কল তিনি করেননি। তাঁদের এই দাবির ভিত্তিতে পুলিস অনুব্রত ও লিটন সরকারের ফোনালাপের অডিও ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠিয়েছে পরীক্ষার জন্য। এদিন, অর্থাৎ সোমবার অনুব্রত জামিন নেন কি না, সেদিকেই ছিল সকলের নজর। কিন্তু তা তিনি করেননি বলেই খবর। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এদিন দুপুরে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের আই কার্ড ঝোলানো দুই চিকিৎসককে এসডিপিও অফিসে ঢুকতে দেখা যায়। সূত্রের খবর, ওই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষই অনুব্রতকে পাঁচদিনের বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিল। মেডিক্যাল কলেজটির কর্ণধার অনুব্রতর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তাই তদন্তের স্বার্থে সবদিক খতিয়ে দেখতে পুলিস ওই দুই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বলেই সূত্রের খবর। যদিও এদিন ওই দুই চিকিৎসক সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। পুলিসও চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বীরভূম জেলা পুলিস সুপার আমনদীপ সিং বলেন, তদন্ত নির্দিষ্ট গতিতে চলছে। এদিন চিকিৎসকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। অনুব্রতর হাজিরা এড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। অনুব্রত বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ গগন সরকার বলেন, কেষ্টদা অসুস্থ, বাড়িতে শুয়ে আছেন। থানায় তাঁর হাজিরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দল যা নির্দেশ দেবে, কেষ্টদা তাই করবে। উনি মুখ্যমন্ত্রী ও দলের অনুগত সৈনিক। এ ঘটনায় দলও তদন্ত করছে।