অভিষেক পাল, বহরমপুর: বিহারের কিডনি গ্যাংয়ের ফাঁদে পড়েছে এই রাজ্যের যুবকরা। মোটা টাকার টোপ দিয়ে তরতাজা ছেলেদের কিডনি কিনে নেওয়া হচ্ছে। ‘অর্গান ডোনেশনে’র নিয়ম না মেনে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর হচ্ছে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিডনি নিয়ে, ২৫লক্ষ টাকায় তা অবৈধভাবে গ্রহীতাকে পাইয়ে দিচ্ছে বিহারের এই গ্যাং। কিডনি দাতার সম্মতি মিললেই নিমেষে কাগজপত্র তৈরি করে বিহার থেকে এজেন্ট পাঠিয়ে বেআইনিভাবে কিডনি পাচার চলছে। বহরমপুরের ক্যাসিনো প্রতারণা মামলার তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিস।
অনলাইন ক্যাসিনো গেম খেলে লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা করে নিজের কিডনিও বেচে দিয়েছেন এক যুবক। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার রৌশান জামানকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে বিহারের কিডনি গ্যাংয়ের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। ভগবানগোলার উপর অড়হর সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক একটি ডেলিভারি সংস্থায় কর্মরত। সেই সূত্রে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বহরমপুরের গোরাবাজারের একটি মেসে থাকতেন। সেখানে এক বন্ধুর টাকা প্রতারণা করার মামলায় পুলিস শনিবার রাতে রৌশানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জেরা করে এই সমস্ত তথ্য পেয়েছে পুলিস।
বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তারির পর রৌশানকে জেরা করা হচ্ছে। গত বছর ১৩জুলাই মুম্বইয়ের একজনকে নিজের কিডনি বিক্রি করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে।
পুলিসি জেরায় সে আরও জানিয়েছে, অনলাইন ক্যাসিনো খেলতে গিয়ে বাজারে প্রচুর টাকা দেনা হয়ে যায়। সেই টাকা কীভাবে শোধ করবে, তা বুঝতে পারছিল না রৌশান। শেষে সে নিজের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিডনি বিক্রির বিভিন্ন গ্রুপ আগেই দেখেছে। সেই গ্রুপের মাধ্যমে বিহারের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। কথাবার্তা এগতেই তড়িঘড়ি বিহারের ওই গ্যাং গত বছর জুলাই মাসে পাঁচ লক্ষ টাকায় রৌশানের কিডনি কিনে নেয়।
ওই টাকা থেকে সে বাড়িতে দু’লক্ষ ২০হাজার টাকা দেয়। কিডনি বিক্রির বাকি টাকাও সে অনলাইন গেম খেলে উড়িয়ে দিয়েছে। এরপর টাকার জোগান না থাকায় সে নানাভাবে প্রতারণা করত বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, দু’দিন আগেই বহরমপুরের এক ব্যক্তির মোবাইলের সিম ও এটিএম কার্ড হাতিয়ে এক লক্ষ ২৫হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। সেই ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে শনিবার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বহরমপুর থানার পুলিস।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদমের নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের অপারেশন হয়েছে। বিহারের কিছু লোক এসে পাঁচ লক্ষ টাকার টোপ দিয়ে কিডনি কিনে নেয়। পরে মুম্বইয়ের এক ব্যক্তিকে সেই কিডনি প্রায় ২৫লক্ষ টাকায় বিক্রি করে তারা।
জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, ওই যুবকের কিডনি বিক্রির বিষয়টি শুনে আমরা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে খতিয়ে দেখে জানা যায়, ঘটনাটি সত্যি। কীভাবে এই কিডনি পাচার চক্র কাজ করছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।