• যুবক খুনে উত্তপ্ত বকুলতলা, ধৃত ১, বিক্ষোভ সামাল দিতে এলাকায় পুলিস ও বিধায়ক
    বর্তমান | ০৩ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বারুইপুর: গুজরাতের সুরাতে দর্জির কাজ করতেন বছর ৩৬-এর যুবক সায়েম আলি খান। কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন রবিবার রাতে। সোমবার সকালে নিজের বাড়ির সামনেই তাঁকে খুন করে দেওয়া হল! দুষ্কৃতীদের মারে সোমবার বেঘোরে প্রাণ গেল ওই যুবকের। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যে ঝামেলার জন্য প্রাণ গেল সায়েমের, তাতে সায়েন আলির কোনও ভূমিকাই ছিল না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জয়নগরের বকুলতলা থানার বুইচবাটি গ্রাম। এদিন দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পশ্চিম রূপনগর থেকে কানকাটা মোড় পর্যন্ত অবরোধ করা হয়। পুলিস গেলে তাদের ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাঁকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। খুনের ঘটনায় আপাতত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।

    ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। মূল রাস্তার ধারে রূপনগর গ্রামের কয়েকজন যুবক মদ্যপান করতে করতে লোকজনকে গালিগালাজ করছিল বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদ করে সায়েমের পরিবার ও গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারা। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় গোলমাল। এলাকায় বোমাবাজি করে ওই দুষ্কৃতীরা। বকুলতলা থানার পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখনকার মতো সব মিটে গেলেও ওই দুষ্কৃতীরা রাগ পুষে রেখেছিল। সোমবার সকালে পাড়ার চায়ের দোকানে বসেছিলেন সায়েম। আশপাশেই ছিলেন তাঁর বাড়ির লোকজন। অভিযোগ, রবিবার যাদের আচরণ ঘিরে ঝামেলার সূত্রপাত, সেই যুবকরা এসে সায়েমের বাবা- কাকাদের মারধর শুরু করে। সায়েম স্বভাবতই বাধা দিতে যান। তখন তাঁর উপরেই চড়াও হয় ওই দুষ্কৃতীরা। লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারা হয় তাঁকে। মারের চোটে সায়েম সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। তড়িঘড়ি সায়েমকে বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় যুবকের। এই খবর গ্রামে পৌঁছতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। দেহ বাড়িতে এনে শুরু হয় বিক্ষোভ। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাস্তায় বসে পড়েন মহিলারা। প্রত্যেকের হাতে ছিল কাঠ, ঝাঁটা ইত্যাদি। খুনের ঘটনায় মোট ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার। পশ্চিম রূপনগরের কুতুবউদ্দীন গাজি নামে এক যুবককের নাম জড়িয়েছে এই ঘটনায়। এলাকায় সে প্রভাবশালী বলে পরিচিত। গোটা ঘটনার পিছনে ওই যুবক রয়েছে বলেই অভিযোগ এলাকাবাসীর।

    এদিকে, অবরোধ, বিক্ষোভের খবর পেয়ে চলে আসে বকুলতলা, কুলতলি ও জয়নগর থানার পুলিস। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বদলে ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে। বাড়তে থাকে বিক্ষোভের ঝাঁঝ। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন গ্রামবাসীরা। বিকেলের দিকে সেখানে হাজির হন জয়নগরের বিধায়ক। উত্তেজিত জনতা তাঁকেও বিক্ষোভ দেখায়। এরপর পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে মৃতের বাড়ি যান তিনি। পরিবারের পাশে থেকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)