• অরক্ষিত জলসীমা! রাজ্যের দেওয়া জমিতে চার বছরেও তৈরি হয়নি কোস্টগার্ডের ঘাঁটি
    বর্তমান | ০৩ জুন ২০২৫
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: বছর ঘুরলে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এখন থেকেই বাংলায় যাতায়াত বাড়াচ্ছেন মোদি-শাহ জুটি। নিন্দুকেরা বলছে, ‘ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু হল বলে!’ যদিও এসব সমালোচনাকে তুড়ি মেরে জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে তৎপর বিজেপি। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তী ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর প্রেক্ষাপটে দেশবাসীর জাতীয়তাবাদী আবেগকে নিজেদের ভোটবাক্সে টেনে আনার সবরকম চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর অভিযোগ, সীমান্ত সুরক্ষায় চাহিদামতো জমি দিতে পারছে না রাজ্য। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সীমান্তের নিরাপত্তা ও অনুপ্রবেশ ঠেকানোর কর্মসূচি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এসবই আসলে রাজনৈতিক কারণে মোদি সরকারের মিথ্যাচার মাত্র। তারই প্রমাণ মিলল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আওতাধীন ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী বা ইন্ডিয়ান কোস্টগার্ডের একটি চিঠি থেকে। গত ২৯ মে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সচিবকে। চিঠি থেকেই স্পষ্ট, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর চাহিদামতো জমি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন মিলেছে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় চার বছর। এখনও সেই জমি নেওয়ার প্রক্রিয়াই শুরু করেনি তারা। উল্টে জমির দামের উপর যে ‘পেনাল ইন্টারেস্ট’ হয়, তা মকুব করে জমি নেওয়ার সময়সীমা আরও বৃদ্ধির জন্য একাধিকবার তারা চিঠি দিয়েছে রাজ্যকে।  

    সুন্দরবন এলাকায় অরক্ষিত জলসীমাকে সুরক্ষিত করার স্বার্থে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী চিঠি দিয়ে রাজ্যের কাছে জমি চায়। কালবিলম্ব না করে নামখানা থানার ফ্রেজারগঞ্জে অমরাবতী মৌজায় ৯.২২ একর জমি পাকাপাকি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। সেখানে একটি ‘মেরিটাইম রেসকিউ সেন্টার’ (বিভিন্ন পরিকাঠামো সহ উপকূলরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটি) তৈরি হওয়ার কথা। জাতীয় সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থাকায় কালবিলম্ব করেনি রাজ্য। জমির জন্য কেন্দ্রকে মাত্র ১৪ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা দিতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু সেই টাকা না মিটিয়ে জমি ফেলে রাখা হয়েছে চার বছর। নিয়ম হল, অনুমোদনের এক বছরের মধ্যে জমি যদি না নেওয়া হয়, তাহলে ৬.২৫ শতাংশ হারে ‘পেনাল ইন্টারেস্ট’ দিতে হয়। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় জমির ‘ভ্যালুয়েশন’। এই অবস্থায় ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে চিঠি দিয়ে ‘পেনাল ইন্টারেস্ট’ মকুব এবং জমি নেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়। সেই আবেদন মঞ্জুর করে রাজ্য। ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা ‘পেনাল ইন্টারেস্ট’ মকুবের আবেদন মেনে নেওয়ার পাশাপাশি জমি নেওয়ার সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। সেই সময়সীমাও অতিক্রান্ত। এই অবস্থায় ২৯ মে ফের রাজ্যকে চিঠি দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেই একই আবেদন করেছে। জমি নেওয়ার সময়সীমা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করেছে তারা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এখন যথেষ্ট তৎপর বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

    রাজনৈতিক মহলের মতে, দেশের সুরক্ষার মতো গুরুতর বিষয় জড়িয়ে থাকায় আবারও হয়তো উপকূলরক্ষী বাহিনীর আবেদন মেনে নেবে রাজ্য। কিন্তু বছর বছর জমি ফেলে রাখায়, এক্ষেত্রে কেন্দ্রের উদাসীনতাই স্পষ্ট হল বলে মনে করছে তারা। 
  • Link to this news (বর্তমান)