• টলমল পায়ে গ্রামের পথে! হাতি থেকে সাবধান
    এই সময় | ০৩ জুন ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: গলায় ‘কারণ সুধা’ ঢেলে জঙ্গলের আশপাশে আর ঘোরাঘুরি করবেন না। তাতে মৌতাত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়ে রাতে টলমল পায়ে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই তাঁকে গাড়িতে তুলে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার নিদান জারি করল বন দপ্তর।

    দপ্তরের এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে যে, রাতে লোকালয়ে চলে আসা বুনো হাতিদের খপ্পরে যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের ৩৬ শতাংশ মদ্যপ। যে কোনও মদের গন্ধে হাতিরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সেটাই হস্তিকুলের স্বাভাবিক অভ্যাস।

    বিষয়টি সামনে আসায় এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের সদস্যদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হাতি তাড়াতে গিয়ে যদি কোনও মদ্যপ ব্যক্তির দেখা মেলে, তবে বনকর্মীরা সংশ্লিষ্ট মদ্যপকে বন দপ্তরের গাড়িতে তুলে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে।

    বন দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত তিন মাসে আলিপুরদুয়ার জেলার ছ’টি ব্লকে হাতির আক্রমণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের বেশিরভাগই সংরক্ষিত জঙ্গলে ঢুকে হাতির মুখোমুখি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। গত শুক্রবার গভীর রাতে জেলার ফালাকাটা ব্লকের কুঞ্জনগরে হাতির হানায় একই পরিবারের বৃদ্ধা মা, ছেলে ও এক সদ্যোজাত শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। তারপরেই আরও নড়েচড়ে বসেছে বন দপ্তর।

    ইতিমধ্যেই জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন লোকালয়গুলিতে ২৮টি দল গঠন করে মানুষকে সচেতন করার জন্য জোরদার প্রচারে নেমেছেন বনকর্মীরা। বর্ষার মরশুমে এই মুহূর্তে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে কমপক্ষে ১৫০টি হাতির অবস্থান রয়েছে।

    রাত নামতেই ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে তারা পাকা কাঁঠাল, ভুট্টা সাবাড় করার লোভে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বুনো হাতিদের ওই দল গুলিকে সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বনকর্মীদের।

    সমীক্ষায় আরও তথ্য উঠে এসেছে যে, হাতির হানায় মৃত্যু অথবা জখম হওয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘মার্জিন অফ এরর’ মানুষেরই। প্রয়োজনের তুলনায় কম লোকবল নিয়ে বন দপ্তরের তরফে বছরভর হাতি কিংবা অন্য বন্যপ্রাণীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হলেও, অনেকাংশেই মানুষের হুঁশ ফেরাতে ব্যর্থ বন দপ্তর।

    জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, ‘অরণ্য সংলগ্ন লোকালয়ে বুনো হাতিরা আনাগোনা করবেই। যার জন্য মানুষকে সাবধানে থাকতে হবে। মদ্যপ অবস্থায় হাতিকে ধাওয়া করা যাবে না। বিষয়টি কিছুতেই মানুষ শুনতে ও বুঝতে চাইছেন না। আমাদের আবেদন কেউ কানে তুলছেন না। যার ফলে দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না।’

  • Link to this news (এই সময়)