এই সময়: মাথার উপরে প্রখর সূর্য। টানা তিনদিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই। এমন আবহাওয়ায় সোমবার খুলে গেল সমস্ত সরকারি স্কুল। প্রায় এক মাস পরে স্কুল খুললেও এই গরমে পড়ুয়ারা কী করে স্কুলে আসবে, তা নিয়ে চিন্তায় দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের স্কুল কর্তৃপক্ষ।
কারণ টানা এক মাস ছুটি থাকার পরেও এ দিন স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল খুবই কম। তাই মর্নিং স্কুলের আবেদন জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে চিঠি দিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।
গরম বাড়লেই টানা ছুটি না দিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছুটি দেওয়া হোক, মত শিক্ষকদের। এ দিকে, স্কুল খোলার প্রথম দিনে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের অধিকাংশই হাজির ছিলেন।
সরকারি স্কুলগুলিতে পূর্ব নির্ধারিত গরমের ছুটি থাকে ৯–১২ দিন। অত্যধিক গরমের জন্য কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মে আপৎকালীন ছুটি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল সমস্ত সরকারি স্কুলে গরমের ছুটি শুরু হয়। কিন্তু ছুটি পড়ার কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া বদলে যায়। লাগাতার বৃষ্টির জেরে অনেকটাই কমে যায় তাপমাত্রা।
গরমের দাপট কমে গেলেও ২ জুন থেকে স্কুল খোলা হবে বলে নোটিস দেয় শিক্ষা দপ্তর। এ দিকে, স্কুল খোলার দিন তিনেক আগে থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে।সোমবার দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
গরমের ছুটি শেষে সোমবার স্কুল খুললেও পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল অনেকটাই কম। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ডিমারি হাইস্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১৭০০। কিন্তু এ দিন স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল প্রায় অর্ধেক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেবশ্রী জানা বলেন, ‘গতকাল জামাইষষ্ঠী ছিল। তার উপরে গরমের দাপট। তাই অর্ধেকের বেশি ছাত্রছাত্রী আজ স্কুলে আসেনি।’ কাঁথি-এগরাতেও দেখা গেল একই ছবি।
আগে দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের প্রাইমারি স্কুলগুলিতে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সকালে স্কুল হতো। এ বার তা হয়নি। ময়নার রাধাবল্লভচক সারদাময়ী বিদ্যাপীঠের রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক আলোক মাইতি বলেন, ‘এ বার গরমের ছুটির মধ্যে আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগেই স্কুল খুলে দেওয়া উচিত ছিল। নতুন করে যে ভাবে গরম পড়েছে, তাতে ক্লাস চালানো মুশকিল। আবার ছুটি দিলেও সিলেবাস শেষ করা যাবে না। তাই মর্নিং স্কুল করার নির্দেশ দিক শিক্ষা দপ্তর।’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গরমের মধ্যে পড়ুয়াদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা চাইলেই মর্নিং স্কুল করতে পারি না। এর জন্য রাজ্যের অনুমতি দরকার। অনুমতি চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অনিমেষ দে বলেন, ‘মর্নিং স্কুলের ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশ নেই। তাই দুপুরেই স্কুল চালাতে হবে।’
অভীক দোলই নামে দাসপুরের কলোড়া হাইস্কুলের এক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুলের বেশ কিছু পাখা অকেজো। গরমে ছেলেমেয়েরা নাজেহাল হয়ে পড়ছে। যখন ছুটির দরকার ছিল না, তখন ছুটি দিল। অথচ যখন ছুটির দরকার, তখন স্কুল খুলে গেল।’
শালবনির মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূন পড়িয়া বলেন, ‘প্রথম দিন পড়ুয়াদের উপস্থিতি খুবই কম। ১৩০০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আজ মাত্র ৮০ জন ছাত্রছাত্রী স্কুলে এসেছে। প্রার্থনার লাইনে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেছি, গরম থাকবে তাই বলে স্কুল বন্ধ করে বসে থাকলে চলবে না।’
শিক্ষক আন্দোলনের মধ্যেও এ দিন স্কুলে যান অধিকাংশ চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক। শিক্ষক আন্দোলের অন্যতম মুখ কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছি আমরা। অনেক শিক্ষক প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে আজ স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। বাকিরা সকলেই স্কুলে গিয়েছেন।’
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ডিমারি হাইস্কুলের চাকরিহারা শিক্ষিকা কুহেলি গোঁড়া বলেন, ‘আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তবে তার মধ্যেও আলোচনা অনুযায়ী আজ স্কুলে এসেছি। আমাদের চাকরি ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। তারপর কী হবে জানি না। আপাতত আমরা স্কুলে যাব। আন্দোলনও চলবে।’