• ব্যান পিরিয়ডের আগেই ইলিশে ছেয়েছে বাজার, চোরাপথে শিকার?
    এই সময় | ০৩ জুন ২০২৫
  • এই সময়, দিঘা: দিঘা, রামনগর, শঙ্করপুর, কাঁথির বাজারে গেলেই চোখে পড়ছে সামুদ্রিক লটে, রুলি বা আমুদি, ভোলা, লাল চিংড়ি–সহ নানা রকমের মাছ। শুধু তাই নয়, ছোট ইলিশ মাছও দেদার বিক্রি হচ্ছে। মাছপ্রিয় বাঙালি তাতে খুশি হলেও বছরের এই সময়ে বাজারে এই ধরনের মাছের জোগান কী ভাবে, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

    প্রত্যেক বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন— এই দু’মাস সমুদ্রে মৎসজীবীদের মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকে। তারপরেও ইলিশ মিলছে বাজারে। সরকারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সমুদ্রের বুকে জাল ফেলছেন কিছু মৎস্যজীবী।

    তাতেই অন্য মাছ-সহ উঠে আসছে ছোট ইলিশ। মৎস্যজীবীরা জানান, ইলিশ নয়, অন্য মাছ ধরতেই তাঁরা সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছেন।

    পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের মৎস্যজীবীরা জানান, জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে জুলাই–অগস্ট পর্যন্ত ডিম পাড়ার জন্য মোহনামুখী হয় ইলিশ। দিঘার সমুদ্রে ইলিশের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সঙ্গে মাঝ সমুদ্রে দেখা যাচ্ছে ট্রলার। ১৫০, ২৫০, ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়েছে।

    ওই ইলিশ ৪০০–৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আমোদি, পমফ্রেট বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। যদিও মৎস্য দপ্তরের দাবি, কড়া নজরদারি রয়েছে। তাই সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ। যে সব ইলিশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তা পাশের রাজ্যের অথবা হিমঘরের হতে পারে।

    পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘শুধু জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে নয় ‘ব্যান পিরিয়ডের শুরু থেকেই মাছ ধরা চলছে। সংসার চালানোর জন্য সামুদ্রিক মাছ ধরতে যেতেই হয়। তার সঙ্গেই জালে ছোট ইলিশ উঠে আসে। চলতি বছরে খটি বা মাছ শুকোনোর মরশুম ভালো যায়নি।

    তার উপর মৎস্যজীবীদের একাংশ সমুদ্র প্রকল্পের কোনও সুবিধা পান না। এই প্রকল্পে মৎস্যজীবী পরিবারদের এই দু’মাস ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। দু’মাসে ১০ হাজার টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। নিজেদের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও মৎস্যজীবীরা ‘ব্যান পিরিয়ডে’ মাছ ধরতে সমুদ্রে যাচ্ছেন।’

    মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির আরও অভিযোগ, মৎস্যদপ্তর ও উপকূলবর্তী থানাগুলির পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সমঝোতা করে কিছু মৎস্যজীবী এই সময়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, গত বছরের ব্যান পিরিয়ডের তুলনায় এ বছর বেআইনি ভাবে সামুদ্রিক মাছের শিকার বেড়েছে।

    যদিও এ কথা মানতে নারাজ মৎস্যদপ্তর। কাঁথি মৎস্যদপ্তরের সহ মৎস্যঅধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুমন সাহা বলেন, ‘সামুদ্রিক মাছের শিকার সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। পুলিশ ও মৎস্যদপ্তরের কর্মীরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। তা ছাড়া দিঘা মোহনা, শঙ্করপুর, পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরের নিলাম কেন্দ্র বন্ধ।

    তাই লুকিয়ে মাছ শিকার করলেও তা বাজারজাত অসম্ভব। দপ্তরের সঙ্গে দিঘার মোহনার মৎস্যজীবী সংগঠনও নজরদারি চালাচ্ছে। তাই বাজারের মাছ অন্য কোনও জায়গার হতে পারে।’

    দিঘা শঙ্করপুর ফিসারম্যান অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘আমাদের দিঘা বা শঙ্করপুর থেকে কোনও ট্রলার ও লঞ্চ সমুদ্রে যায়নি। যাঁরা নিয়ম না মেনে মাছ ধরছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মৎস্যদপ্তরের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

  • Link to this news (এই সময়)