• আর্তের সেবা করতে চান তৃণমূলে ব্রাত্য আরাবুল
    এই সময় | ০৩ জুন ২০২৫
  • প্রশান্ত ঘোষ, ভাঙড়

    মন্তব্যটা করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, সম্প্রতি প্রয়াত আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে আরাবুল ইসলামের খাস তালুক বলে পরিচিত ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করল রেজ্জাককে।

    দলের অন্দরেই অভিযোগ ওঠে, রেজ্জাককে নির্বাচনী প্রচারে আরাবুল যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন না। আরাবুল যেহেতু ভাঙড়ে একটা ফ্যাক্টর, তা–ই ওই অসহযোগিতায় রেজ্জাকের সমস্যা হবে কি না, সাংবাদিকদের সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ রাজনীতিবিদ রেজ্জাকের মন্তব্য ছিল, ‘আরাবুল আগে ফ্যাক্টর ছিল, এখন ট্র্যাক্টর হয়ে গিয়েছে।’

    ওই ভোটে রেজ্জাকই জিতেছিলেন। সেই সময়ে ‘ফ্যাক্টর’ থেকে ‘ট্র্যাক্টর’ না–হলেও এখন সেই আরাবুল যেন চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোকে রূপান্তরিত— এমনই জানাচ্ছেন তাঁর অনুগামীদের একাংশ।

    যে আরাবুলকে একটা সময়ে ‘তাজা নেতা’র তকমা দিয়েছিলেন রাজ্যের শাসকদলের কোনও কোনও নেতা, সেই আরাবুল যেন রাজনীতিবিদ হিসেবে মিইয়ে গিয়েছেন। ভাঙড় কলেজে তিনি যখন পরিচালন সমিতির সভাপতি, সেই সময়ে আরাবুলের বিরুদ্ধে কলেজের স্টাফরুমে ঢুকে এক শিক্ষিকাকে জলভর্তি জগ ছুড়ে মেরে আহত করার অভিযোগ উঠেছিল।

    সে ব্যাপারে প্রশ্নের মুখে পড়ে আরাবুল অবলীলায় বলেছিলেন, ‘কলেজে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে সিপিএমের একটা সেকশন।’ আর সেই আরাবুলের মুখে এখন রাজনীতিটাই নেই! তৃণমূল থেকে গত ১০ জানুয়ারি বহিষ্কৃত হওয়ার পর ভাঙড় আরাবুল ইসলাম এখন মন দিয়েছেন সেবাধর্মে।

    আরাবুলের কথায়, ‘কলকাতার এত কাছে অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও এই এলাকায় কোনও বড় হাসপাতাল নেই। একটা ৫৫ বেডের হাসপাতাল তৈরি করছি। গরিব মানুষ কম পয়সায় দ্রুত আধুনিক চিকিৎসা পাবেন এখানে। আপাতত এটাই আমার স্বপ্ন।’

    ঠিক হাসপাতাল নয়, নার্সিংহোম। পোলেরহাট বাজারের কাছে নির্মিত একটি চারতলা বাড়িতেই ওই বেসরকারি সুপারস্পেশালিটি নার্সিংহোম তৈরি হচ্ছে। ইদের পরেই এই হাসপাতাল চালু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আরাবুল।

    যদিও এ নিয়ে আরাবুলের কট্টর বিরোধী, ক্যানিং–পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার কটাক্ষ, ‘উনি যদি সাধারণ মানুষের সেবা করবেন, তা হলে নার্সিংহোম তৈরি করেছেন কেন? দাতব্য চিকিৎসালয় চালান।’

    নির্মীয়মাণ এই নার্সিংহোমের দেখভাল, সকাল–বিকেল নমাজ, সাড়ে চার বছরের নাতি অর্থাৎ পুত্র হাকিমুলের ছেলে সাফিরের সঙ্গে খেলাধুলো করেই সময় কাটছে তাঁর। কখনও–সখনও নিউ টাউনের দিকে ছুটছে তাঁর গাড়ি।

    আরাবুলের দাবি, যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই দলীয় কর্মী, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষরা তাঁর সঙ্গে দেখা করছেন, খোঁজ–খবর নিচ্ছেন। যদিও আরাবুলের বাড়িতে আসতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কেন?

    আরাবুলের অনুগামীদের বক্তব্য, ‘দাদার বাড়িতে ঢোকার পথে দু’টো সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছে পুলিশ। সেই ক্যামেরা দিয়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ওই সব ফুটেজ পুলিশ পাঠিয়ে দিচ্ছে লাগোয়া এলাকার এক বিধায়কের কাছে।’

    একটা সময়ে ভাঙড়ের বিধায়ক ছিলেন আরাবুল। সেটা ২০০৬, বাম আমল। তৃণমূল আমলে আরাবুল প্রথমে ভাঙড়–২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি, তার পর সভাপতিও হন। তিনি কি আর কখনও রাজনীতির ময়দানে ফিরবেন না?

    সখেদে আরাবুল বলেন, ‘কী আর করব! এখন আমার কোনও কাজ নেই। ১৯৮৪ সাল থেকে দিদিমণির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে আছি। দিদিমণি যখন যাদবপুরে দাঁড়িয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে, তখন সোনারপুরে এজেন্ট দেওয়ার জন্য কোনও কর্মী পাওয়া যায়নি। আমি ভাঙড় থেকে ১০০ লোক নিয়ে সোনারপুরের বুথে বুথে বসিয়েছিলাম। দিদি জিতে প্রথম বার সাংসদ হয়েছিলেন।’

    আরাবুলের সংযোজন, ‘আজও আমি মনে করি দিদি, অভিষেকদা আমার অভিভাবক, গুরুজন। তাঁরা যখনই আমাকে ডাকবেন, আমি দলের জন্য লড়তে প্রস্তুত।’

  • Link to this news (এই সময়)