• সংবিধান রক্ষায় একতার ডাক বিরোধী নেতাদের
    আনন্দবাজার | ০৩ জুন ২০২৫
  • সাম্প্রতিক অতীতে বিরোধী ঐক্য নিয়ে নানা টানাপড়েন সামনে এসেছে। তবে বিজেপির আমলে দেশে সংবিধান বিপন্ন বলে অভিযোগ করে ফের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক জোট হওয়ার বার্তা দিল বামেরা। এই সূত্রেই বিরোধীদের ‘খামতি’র কথাও উঠে এল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথায়। এর সঙ্গেই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ভাগাভাগি’র রাজনীতি করার অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেতা কানহাইয়া কুমার। মৌলালি যুব কেন্দ্রে সোমবার আয়োজিত ‘সংবিধান বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ কনভেনশনে উপস্থিত হয়ে বিরোধী নেতৃত্বের গলায় এমনই নানা সুর শোনা গিয়েছে।

    ইংরেজ আমলে আরএসএসের ‘অবস্থানে’র কথা বলে কানহাইয়ার বক্তব্য, “গণতন্ত্রের জন্য যাঁরা রক্ত ঝরাননি, যাঁরা সাম্রাজ্যবাদের অংশ ছিলেন, তাঁরাই আজ চেয়ারে বসে গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরছেন! দেশবাসীর মধ্যে ভাগাভাগি করার চেষ্টা চলছে। ১৪০ কোটি মানুষকে খণ্ডিত করলে দেশের উন্নয়ন হবে?” কেন্দ্রের অর্থনৈতিক নীতি, ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী বৈদেশিক নীতি ‘ব্যর্থ’ বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেছেন তিনি।

    বিজেপিকে নিশানা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, “জাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে আমরা বলছি, সংবিধান বাঁচাও।” একতার বার্তা দিয়ে তাঁর সংযোজন, “মানুষকে আমরা যদি বলি, এককাট্টা হও, তা হলে আমরা একসঙ্গে থাকব না, এটা বলার নৈতিক অধিকার থাকে না। ব্যাপকতম ঐক্য গড়তে হবে।” সংবিধান রচনায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনাকে স্মরণ করে বিজেপির নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশেনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও। বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “ধর্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদ ছিল না আমাদের। জাতীয়তাবাদ বুলডোজ়ার-রাজনীতি কেন্দ্রিক হলে এবং সেটাকে মেনে নিলে সংবিধান রক্ষা করা যাবে না।” বাংলার বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষিতেও দ্রুত ‘তৃতীয় শক্তি’র গড়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।

    তবে বিরোধী-একতার ‘খামতি’র কথাও মনে করাতে চেয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। তাঁর মতে, “আমাদের কাছে এখন দেশ, সংবিধান না কি রাজনৈতিক দল বড়, সেটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা যাচ্ছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোট হয়েছে। সংবিধান রক্ষার প্রশ্নে আমরা বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়েছি। কিন্তু লক্ষ্য এবং সমন্বয় সংক্রান্ত খামতি মেটাতে পারিনি।” এই প্রেক্ষিতেই আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী বলেছেন, “যাঁরা যত বড় দল, তাঁদের তত বিনয়ী হয়ে আমাদের মতো ছোট দলকে আঁকড়ে ধরতে হবে।” ওয়াকফ সংশোধনী আইন, আদিবাসীদের অধিকার-সহ নানা প্রসঙ্গে কেন্দ্রকেও নিশানা করেছেন নওসাদ।

    সাংবাদিক সিদ্ধার্থ বরদারাজন বাক্-স্বাধীনতার উপরে আক্রমণ, সিপিএম নেত্রী সায়রা শাহ হালিম ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন প্রসঙ্গে মোদী সরকারের বিদেশনীতিতে বদল-সহ নানা প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন। প্রসেনজিৎ বসু, আলি ইমরান রাম্‌জ (ভিক্টর), কল্লোল মজুমদার প্রমুখের আহ্বানে হওয়া কনভেনশন থেকে পহেলগাম হামলা পরবর্তী ঘটনা নিয়ে সংসদে অধিবেশ ডাকা, ওয়াকফ সংশোধনী, নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন বাতিলের দাবিও উঠেছে। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে গণতন্ত্রের অবক্ষয় হয়েছে বলে অভিযোগ করে তা পুনরুদ্ধারের দাবিও জানানো হয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)