দলের কর্মিসভায় আধ ঘণ্টার বক্তৃতায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘প্রাক্তন’ করার ডাক দিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু বাংলায় শুধু যে ‘হুঙ্কারে’ কাজ হবে না, তার জন্য চাই নিখুঁত পরিকল্পনা, তা অমিত শাহের চেয়ে ভাল আর কেউ জানে না! বন্ধ দরজার আড়ালে শাহ বঙ্গ বিজেপির নেতাদের দিয়ে গিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
সূত্রের খবর, শাহ বঙ্গ বিজেপির নেতাদের ‘সময়ের উপযুক্ত ব্যবহারে’র পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহাওয়া বিজেপির রাজনীতির পক্ষে ‘অনুকূল’। এই সময়কেই কাজে লাগাতে বলার পাশাপাশি নির্বাচনের পুরোদস্তুর কাজে (ইলেকশন মোড) ঢুকে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তাঁর নিদান, এই সময়ে বিজেপি কর্মীদের কার্যত সর্বক্ষণের কর্মীর মতো রাজনীতির কাজেই পড়ে থাকতে হবে।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চে বক্তৃতা শেষ করার পরে কিছু ক্ষণ সাজঘরে ছিলেন শাহ। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই অবসরে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, পর্যবেক্ষক, রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব ও পদাধিকারী সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে সামান্য মত বিনিময় করেছেন তিনি। এ ছাড়া, তাঁর গোটা সফরে সঙ্গী ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার ফাঁকেই পরামর্শ দিয়েছেন শাহ, সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সভার জমায়েত ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও।
বিজেপি সূত্রের খবর, শাহের একান্ত আলোচনায় উঠে এসেছে ‘বঞ্চনা’ ঘিরে রাজনীতির কথা। তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র যে প্রচার সামনে এনেছে, তা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। উল্টো দিকে, কেন্দ্রের সরকার রাজ্যের জন্য যে বিপুল বরাদ্দ করেছে, তার সঠিক প্রচার হয়নি। তিনি জানতে চেয়েছেন, আবাস যোজনা আর ১০০ দিনের কাজ বাদে কি কেন্দ্র আর কোনও প্রকল্পে বরাদ্দ করে না? প্রতিটি বিধানসভায় কেন্দ্রের কোনও না কোনও প্রকল্পের কাজ চলছে। বিজেপি কর্মীরা তাঁর কতটা খোঁজ রাখেন? বিজেপির প্রচারে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিষয়ে আরও জোর দিতে বলে গিয়েছেন শাহ। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, “বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পকে রাজ্যে তৃণমূল নিজেদের প্রকল্প বলে চালাচ্ছে। এর উল্টো দিকে আমাদের প্রচার অনেকটাই দুর্বল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং তার সাফল্য নিয়ে ভাল ভাবে প্রচার করতে হবে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে জানাতে হবে।”
তবে শাহের সফরের আগে-পরে রাজ্য সভাপতি নিয়ে কোনও ঘোষণা হয় কি না, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল রাজ্য বিজেপির একাংশের মধ্যে। এক নেতার বক্তব্য, “শাহ আন্নামালাইকে পাশে বসিয়ে বলে দিয়েছিলেন, উনিই তামিলনাড়ুর রাজ্য সভাপতি থাকবেন। আমরা তো ভেবেছিলাম, আমাদের এখানেও তা-ই হবে। কিন্তু হল না!” শাহের মঞ্চ থেকেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত অবশ্য দলে ঐক্যের বার্তা দিয়ে রেখেছেন। কর্মীদের উদ্দেশে রাজ্য সভাপতি স্পষ্টই বলেছেন, “প্রার্থী পছন্দ হয়নি, ওঁকে চাই, ওঁকে চাই না। এ সব বলবেন না! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে কথা দিয়ে যান, দল যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁকেই ভোট দেবেন। কলাগাছ দাঁড় করালে তার হয়েই লড়াই করবেন!”
অন্য একটি বিষয় নিয়েও বিজেপি শিবিরে চর্চা হচ্ছে। শাহ এসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের জবাব দিলেও তৃণমূল দলের তিন মহিলা মুখকে পাঠিয়ে প্রত্যুত্তর দিয়েছে। রাজ্য বিজেপিও দলের সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল ও লকেট চট্টোপাধ্যায়কে পাল্টা জবাব দিতে মাঠে নামিয়েছিল। কিন্তু শাহের সভায় কোনও মহিলা মুখেরই দৃশ্যত ভূমিকা না থাকায় প্রশ্ন উঠছে দলের মধ্যেই। লকেট ইন্ডোরের সভাস্থলে ছিলেনই না। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার। অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করলেও অগ্নিমিত্রাকে সে দিন সঞ্চালনার কাজে দেখা যায়নি। রাজ্য বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, “কোন কর্মসূচিতে কে কী দায়িত্বে থাকবেন, দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ঠিক করে দেন। এই বিষয়ে কারও কিছু বলার নেই।”