• উদ্যোগী তৃণমূল, আজ বৈঠক ঘিরে কি এককাট্টা ‘ইন্ডিয়া’
    আনন্দবাজার | ০৩ জুন ২০২৫
  • পহেলগাম সন্ত্রাস এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাত পরবর্তী পরিস্থিতি দেশবাসীর সামনে ব্যাখ্যা করার লক্ষ্যে সংসদের বিশেষ অধিবেশন দাবি করেছে অধিকাংশ বিরোধী দল। তবে গত এক সপ্তাহে এই দাবির রাশ নিজেদের হাতে নিতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। তাদের উদ্যোগে মঙ্গলবার দুপুরে নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বসছে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠক। বুধবারের মধ্যে বিশেষ অধিবেশনের আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেওয়ার কথা বিরোধী নেতাদের। তৃণমূল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বৈঠকে বসে সেই চিঠিতে সইসাবুদের বিষয়গুলি ঝালিয়ে নেওয়া হবে।

    যদিও পৃথক ভাবে, কংগ্রেস, বাম, এসপি, আরজেডি-র নেতা সাংসদরা ইতিমধ্যেই এই দাবিতে চিঠি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীকে। তৃণমূলও একটি চিঠি তৈরি করেছে সেন্ট্রাল হলে বসে। কিন্তু সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে এই বিশেষ অধিবেশনের দাবিকে কেন্দ্র করে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে ঐক্যবদ্ধ চেহারায় দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

    তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ বলেছেন, “যখন অগ্রাধিকারের প্রশ্ন ওঠে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময়েই ইন্ডিয়া-কে সামনে রাখেন।” ঘটনা হল, তৃণমূল শেষ কবে এ রকম বলেছে, তার নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে নেই। ‘ইন্ডিয়া’র সবচেয়ে বড় দল কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য সব বিরোধী দলের কোনও না কোনও ভাবে নির্বাচনী সমঝোতা ছিল বা রয়েছে। একমাত্র তৃণমূল ছাড়া। তৃণমূল সে কথা বারবারই বলে থাকে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘অ্যালার্জি’বশত, ইন্ডিয়া মঞ্চের মধ্যে যে ‘জিঞ্জার গোষ্ঠী’ তৈরি হয়েছে, তার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব নিতেও মমতার দলকে দেখা গিয়েছে বারবার। এ বারেও গোড়ায় যখন সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেরা কেন্দ্রের কাছে বিশেষ অধিবেশনের দাবি তোলে, তখনও তাতে যোগ দেয়নি তৃণমূল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এই বিষয়টি নিয়ে সমস্ত দলকে এক ছাতার তলায় আনার প্রধান উদ্যোগী তারাই।

    প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক আলিপুরদুয়ার সফরকালে বিজেপি-র সঙ্গে যারপরনাই তিক্ত হয়েছে তৃণমূলের বাগযুদ্ধ। অন্যরা তো রয়েছেনই কিন্তু, খোদ মমতাই এগিয়ে এসে মোদীর ‘সিঁদুর তত্ত্ব’কে তছনছ করতে চেয়ে কার্যত ব্যক্তিগতস্তরেও আক্রমণ শানিয়েছেন। অন্য দিকে, এই তিক্ততার আবহেই রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময়চাওয়া হয়েছে নবান্নর পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক শিবির বলছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি বসে বকেয়া অর্থ ছাড়ারজন্য আবেদন জানানো উদ্দেশ্য মমতার। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য যে টাকা রাজ্যকে দেওয়া উচিত, তা থেকে লাগাতার বঞ্চিত করে চলেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের থেকে বাংলা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পায়। চার বছর ধরে রাস্তা উন্নয়নের টাকা দেয়নি কেন্দ্র।

    ঘটনা হল এই সময়েই, দিল্লির ২০, রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোডে তৃণমূলের সদর কার্যালয়ের উদ্বোধন হওয়ার কথা। তৃণমূল নেত্রী দিল্লিতে থাককালীনই ওই উদ্বোধনের চেষ্টা চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত মমতার দিল্লি আসার তারিখ চূড়ান্ত হয়নি বলেই খবর। বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সময় দেওয়ার উপরেও।

    তবে আগামী কাল তৃণমূলের উদ্যোগে এই বৈঠকে অন্য দলগুলি থেকে কারা যোগ দেবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ভোপালে। কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং কে সি বেণুগোপাল দিল্লির বাইরে। ফলে লোকসভা বা রাজ্যসভার কংগ্রেস উপনেতার যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেরেকের কথায়, “সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে আমরা একসঙ্গে এগোচ্ছি জুন মাসে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি নিয়ে।” শরদ পওয়ার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর দল ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বাইরে কথা বলায় বিশ্বাসী নন। ফলে এনসিপি (শরদ পওয়ার) থাকবে না বৈঠকে। তৃণমূল আশা করছে, বাকি কমবেশি ১৮টি বিরোধী দলের সংসদীয় প্রতিনিধি একত্র হবেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)