• ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া চার্জশিট মাদক মামলায় বৈধ: হাইকোর্ট
    এই সময় | ০৩ জুন ২০২৫
  • বিতর্কের অবসান নাকি তৈরি হলো নতুন বিতর্ক! উদ্ধার হওয়া মাদকের ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়াই মাদক মামলায় অভিযুক্ত বা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের চার্জশিট বৈধ হিসেবে গণ্য হবে বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

    পাচার-সহ মাদকের বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় হওয়া ভূরি ভূরি মামলা জমে কার্যত পাহাড় তৈরি হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়, সময় মতো ফরেন্সিক রিপোর্ট না–পাওয়াকে।

    আদালত ও পুলিশ সূত্রের খবর, গোটা দেশে মাদক মামলা ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বেড়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ (২০১৮–তে ৬৩১৩৭, ২০২২–এ ১১৫২৩৬)। স্বভাবতই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাদক মামলায় গ্রেপ্তারিও (২০১৮–তে ৮১৭৭৮, ২০২২–এ ১৪৪৮১২)।

    কিন্তু উদ্ধার হওয়া মাদকের ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য ল্যাব বা পরীক্ষাগারের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। মাদক মামলায় কোনও অভিযুক্তর বিরুদ্ধে মামলা পোক্ত করতে হলে প্রয়োজন প্রথমত মাদক উদ্ধার করা, দ্বিতীয়ত উদ্ধার হওয়া মাদক কতটা নিখাদ, সেটা প্রমাণ করা। মাদক কতটা ‘পিওর’, সেটা বোঝা যায় ল্যাবে তার ফরেন্সিক পরীক্ষা করিয়ে।

    কিন্তু ল্যাবের অভাবে মাদক পরীক্ষার রিপোর্ট সময় মতো হাতে পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা, কাজেই ওই রিপোর্ট আদালতে পেশ করাও সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের পক্ষে। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে, মাদক মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর কাছ থেকে বা তাঁর সূত্রে উদ্ধার হওয়া মাদকের ফরেন্সিক রিপোর্ট সম্বলিত চার্জশিট বিধিবদ্ধ সময়ের মধ্যে (মাদক মামলার ক্ষেত্রে ১৮০ দিন) আদালতে পুলিশ জমা দিতে না–পারলে কেবল সেই যুক্তিতে অভিযুক্তর জামিন পাওয়া কি সহজ হবে?

    নাকি, বাজেয়াপ্ত হওয়া মাদকের ফরেন্সিক রিপোর্ট ওই সময়সীমার মধ্যে না–পাওয়া গেলে পুলিশ যদি সেই রিপোর্ট ছাড়াই চার্জশিট জমা দেয়, সেটা বৈধ হিসেবে গণ্য হবে?

    এ নিয়ে কেবল এই রাজ্যে নয়, গোটা দেশেই আইনজ্ঞরা দ্বিধাবিভক্ত। তবে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এমন জটিল আইনি প্রশ্ন তুলে দায়ের হওয়া একগুচ্ছ মামলায় রায় দিয়েছে।

    ডিভিশন বেঞ্চের ওই রায় অনুযায়ী, মাদক মামলায় এখন থেকে সময়ের মধ্যে ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়াই চার্জশিট জমা দিলে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। কাজেই, সে ক্ষেত্রে পুলিশ ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি, কেবল এই যুক্তিতে অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।

    এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন রাজ্য থেকে কয়েকশো মামলা হয়েছে। শীর্ষ আদালত কিন্তু এর আগে, কলকাতা হাইকোর্ট যা বলেছে তার উল্টো অবস্থান নিয়ে রায় দিয়েছিল। অর্থাৎ, মাদক মামলায় ফরেন্সিক রিপোর্ট ১৮০ দিনের মধ্যে পুলিশ জমা দিতে না–পারলে অভিযুক্তর জামিনের পক্ষে সায় দেয় শীর্ষ কোর্ট।

    কিন্তু সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়। ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন ওই আবেদনের শুনানি করে আগের রায় স্থগিত রাখে শীর্ষ আদালত। এখন সেই মামলা চূড়ান্ত শুনানির জন্য রয়েছে বিচারপতি সুর্য কান্তর বেঞ্চে। তারই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের ওই রায়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে।

    ৃআইনজীবী সৌম্যজিৎ দাস মহাপাত্রর যুক্তি, ‘মাদক মামলায় অভিযুক্তর কাছ থেকে যে জিনিস বাজেয়াপ্ত হলো, তা আদৌ মাদক কি না, সেটাই নিশ্চিত করে ফরেন্সিক রিপোর্ট। উদ্ধার হওয়া যে জিনিসকে পুলিশ হেরোইন বলে প্রথমে জানাল, পরে যদি সেটা ট্যালকম পাউডার বলে ফরেন্সিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তা হলে?

    সে ক্ষেত্রে ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া অভিযুক্তর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিলে মূল অভিযোগটা নিয়েই সংশয় থাকবে। এটা অভিযুক্তর মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করবে।’ আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট নিয়ম করে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে অভিযুক্তর জামিন পাওয়ার অধিকারের পক্ষে সওয়াল করছে।

    যদিও এই মামলার অন্যতম সরকারি কৌঁসুলি রুদ্রদীপ্ত নন্দীর পাল্টা যুক্তি, ‘মাদক মামলার তদন্তে পুলিশ কোনও তল্লাশি অভিযানে গেলে এখন মাদক পরীক্ষার জন্য সরঞ্জামও নিয়ে যায়। প্রাথমিক পরীক্ষা হয়ে যায় ওই জিনিস বাজেয়াপ্ত করার সময়েই। মামলার বিচারের সময়ে ফরেন্সিকের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রয়োজন হয়।’

  • Link to this news (এই সময়)