• দ্বারকেশ্বরের উপরে ঝুলছে সেতু, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা
    এই সময় | ০৩ জুন ২০২৫
  • দিব্যেন্দু সরকার, খানাকুল

    খানাকুলের পূর্বঠাকুরানিচক এলাকায় দ্বারকেশ্বর নদের উপরে গুরুত্বপূর্ণ সেতুর মধ্যাংশ ভেঙে ঝুলে যাওয়ায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মধ্যবর্তী পিলার ভেঙে নদীতে মিশে গিয়েছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে সেতুর দুই মুখে। যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ।

    ভাঙা সেতু নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপানউতর শুরু হয়ে গিয়েছে। শাসক দলের লোকজনের অভিযোগ, বামেরা এই সেতু নির্মাণ করেছিল অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। আর বর্তমানে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্বে যারা আছে, অর্থাৎ বিজেপি, তারাও কোনও রক্ষণাবেক্ষণ করেনি।

    জনস্বার্থ কেউই দেখেনি এই দুই দল। তার ফলেই সেতুটির এই দৈন্য দশা। হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুর— এই দুই জেলার সংযোগকারী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতুর মধ্যাংশ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।

    খানাকুলের পূর্বঠাকুরানীচক এলাকায় দ্বারকেশ্বর নদের উপরে এই সেতু বামেদের আমলে তৈরি। সেই থেকে আজ অবধি সেতুর কোনও কাজই হয়নি বলে অভিযোগ। সেতুর স্বাস্থ্যের হাল ফেরানো তো দূরের কথা, কোনও দিনই সামান্যতম মেরামতিও হয়নি। তাই জরাজীর্ণ এই সেতুর উপর দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছিলেন এই দুই জেলারই হাজার হাজার মানুষ।

    রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পরেও সেতুর কাজ হয়নি। আবার স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত বর্তমানে বিজেপির দখলে। তারাও সেতুটি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। দলাদলি না করে, জনস্বার্থেই অবিলম্বে সেতুটি নতুন করে নির্মাণের দাবি তুলেছেন এলাকার সব পক্ষের মানুষজন।

    তাঁদের প্রশ্ন, সেতুটি দিয়ে কি কোনও নির্দিষ্ট দলের লোকজন যাতায়াত করেন?পশ্চিম খানাকুলের দ্বারকেশ্বরের উপরে এই সেতু দিয়ে খুব সহজে, কম রাস্তা অতিক্রম করে হুগলির খানাকুল থেকে ঘাটাল, বীরসিংহ, মনসুখা-সহ একাধিক এলাকায় যাতায়াত করা যায়। আরামবাগ শহর এখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। যাওয়াওে কষ্টকর। আর তার উপরে যোগাযোগও অনুন্নত। তাই দুই জেলার ছাত্রছাত্রীরা সীমানাবর্তী স্কুলেই পড়াশোনা করে।

    কিন্তু সেতু ভেঙে যাওয়ায়, নাজেহাল দুই জেলার হাজার হাজার মানুষ। আবার দোকানপাট, হাটবাজার, পঞ্চায়েত, অফিস যাতায়াতও বন্ধ। পূর্বপাড় থেকে পশ্চিম পাড় পর্যন্ত যাতায়াত পুরোপুরি ব্যাহত। দু’দিকের প্রবেশ পথ সিল করে দিয়েছে পুলিশ, যাতে কেউই এই ভগ্নপ্রায় সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে না পারেন। ব্যাপক অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের।

    এইটুকু রাস্তা ঘুরপথে আসতে হলে, এক-দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। অবিলম্বে সেতুটি নির্মাণের দাবি তুলেছেন দুই এলাকার মানুষজন। ভগ্ন সেতুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পারদও চড়ছে এলাকায়। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় খানাকুল থানার পুলিশ সেতুটির দুই মুখ ঘিরে রেখেছে।

    এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সঞ্জয় সামন্ত, যাদব চক্রবর্তী, গ্রামীণ চিকিৎসক সুফলচন্দ্র পাত্র-সহ একাধিক জনের বক্তব্য, গত পাঁচ বছর ধরেই এই সেতুটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে।কিন্তু শাসক দলের লোকজন কোনও পদক্ষেপ করেনি। এখান থেকে ঘাটাল, মনসুখা, বীরসিংহ, দেওয়ান চক-সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যাতায়াত করা যায় খুব সহজেই।

    আবার পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে হুগলির এই সব এলাকাতে আসা যায় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপানউতরে কাজ থমকে। তার জেরে সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ভেঙে পড়ে বলে অভিযোগ। বিজেপির স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রামকৃষ্ণ মাইতি বলেন, ‘আমরা প্ল্যান–প্রোগ্রাম করে পাঠিয়েছি। আশা করছি, খুব দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।’

    খানাকুলের বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘বামেদের আমলে তৈরি হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল সরকার কী করেছে? এরা খেলায়, খাওয়ায়, সবেতেই টাকা দিতে পারে। কিন্তু রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণের জন্য এদের আর টাকা থাকে না। উন্নয়নে নেই।মজায় আছে। খানাকুলের পূর্বঠাকুরানিচক এলাকার সেতুটি আজ অকেজো হয়ে গেল।

    তার জন্য দায়ী এই সরকার। আমি অনেক বার বিধানসভায় এই সব সেতু, রাস্তাঘাট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। কিন্তু এরা এখানে টাকা দেবে না। মানুষের জন্য এরা নেই।’

    অন্য দিকে, তৃণমূলের নেতা শেখ হায়দর আলি বলেন, ‘তিনটি সেতুর প্ল্যান এস্টিমেট পাঠিয়েছি। আসলে বিজেপি কিছুই জানে না। ওরা তো ওই এলাকার পঞ্চায়েতে আছে। আজ পর্যন্ত কিছু কাজ করেছে? আসলে ওরা চায় না, এলাকার উন্নয়ন হোক। আমরা সব পাঠিয়েছি।আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে যাবে।’

  • Link to this news (এই সময়)