• সমুদ্রে মাছ ধরায় দু’মাসের নিষেধাজ্ঞা, বাঙালির পাতে অমিল পমফ্রেট, তোপসে-ভোলা
    প্রতিদিন | ০৩ জুন ২০২৫
  • সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: কথায় আছে, মাছেভাতে বাঙালি। রুই, কাতলা, মৌরলার পাশাপাশি আমবাঙালির পাতে স্বচ্ছন্দে জায়গা করে নেয় ইলিশ, পমফ্রেট, রূপচাঁদার মতো সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু, সামুদ্রিক মৎস্যপ্রিয় বাঙালির কাছে সময়টি কিন্তু মোটেই সুখকর নয়। কারণ, সামুদ্রিক মাছের বংশবৃদ্ধিতে প্রতি বছরের মতো এবারও লাগু হয়ে গিয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। কারণ, এই দু’মাসই ইলিশ এবং অন্যান্য মাছের প্রজননকাল। ফলে, বাজারে আকাল ইলিশ-সহ সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের। বাজারগুলিতে সেকারণেই দেখা নেই কোনও সামুদ্রিক মাছের। বিক্রেতারা জানান, এবার স্টোরের ইলিশও নেই। নেই কোনও সামুদ্রিক মাছই।

    পাইকারি বাজারের এক মাছবিক্রেতার কথায়, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা চলার প্রথমদিকে হিমঘরে থাকা সামুদ্রিক মাছ ক্রেতাদের চাহিদা কিছুটা পূরণ করেছে। কিন্তু, এখন চাহিদা থাকলেও জোগান একেবারেই নেই। মাছের বাজার সামুদ্রিক মাছশূন্য। নদীর মাছ হাতে গোনা যা পাওয়া যাচ্ছে সেই মাছের দামও বেশ চড়া। হিমঘর ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সামুদ্রিক মাছের আকাল পাইকারি বাজারগুলিও। ডায়মন্ড হারবারে নগেন্দ্রবাজারের পাইকারি মাছের বাজার এখন ইলিশশূন্য তো বটেই, নদী ও সমুদ্রের অন্যান্য মাছেরও দেখা মিলছে না।
    খুচরো ও পাইকারি মাছের বাজারগুলিতে ইলিশ-সহ নদী ও সমুদ্রের পমফ্রেট, তোপসে, ম্যাকরেল, ভোলা, তেলিয়াভোলা, বোমলা, টুনা, সোর্ডফিশ, আড়মাছ, শিমুল, সেলে, মুরলি, বাউল, শঙ্কর মাছের মতো সুস্বাদু মাছ অমিল। কারণ ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সমুদ্র ও নদীতে মাছ ধরা নিষেধ। মাছের বংশবৃদ্ধি ঘটাতেই এই সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে কয়েক বছর ধরেই। সমুদ্র থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ঘাটে বর্তমানে নোঙর করে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনহাজার ট্রলার। ঘাটে ঘাটে বাঁধা মৎস্যজীবীদের আরও ৮ হাজার নৌকা ও ভুটভুটি।

    ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘ইলিশ-সহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের এই সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। মাছের প্রজননকালে সরকারি এই নির্দেশিকা নিঃসন্দেহে যথার্থ। তবে গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীরা মাছ না ধরলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হুগলি, মুড়িগঙ্গা, মাতলা, রায়মঙ্গল, মনি ও কলস নদীতে ছোট নৌকা ও ভুটভুটি নিয়ে অবাধে চলছে মাছ ধরা। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রশাসন ও মৎস্যদপ্তরের এবিষয়ে কড়া নজর রাখা জরুরি।’’ এই দুমাস বেআইনিভাবে নদীতে মাছ ধরা মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও জোরালো দাবি জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, সামুদ্রিক মাছ নদীতে ডিম পাড়তে এসে মৎস্যজীবীদের জালে বন্দি হয়ে যাচ্ছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা, সেই উদ্দেশ্যই বিফলে যাচ্ছে।

    বিজনবাবুর কথায়, ‘‘আসলে নদীতেই মাছের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই দু’মাস সময়ের মধ্যেই জোয়ার ও ভাটার টানে ইলিশ-সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ মোহনায় ঢুকে নদীর মিষ্টি জলে ডিম পাড়তে আসে। সেই নদীতেই যদি মাছ ধরা বন্ধ না করা যায় তাহলে আর কী লাভ!’’ তবে, ভুখা পেট কোনও কথা শোনে না। সংসারে বড়ই অভাব। তাই বংশপরম্পরায় মাছ ধরা পেশা ছেড়ে এই দু’মাসের জন্য মৎস্যজীবীরা একে একে যোগ দিচ্ছেন ভিন্ন পেশায়। কেউ ট্রলার সারাইয়ের কাজে ব্যস্ত, কেউ বুনছেন জাল। কেউ বা আবার জাল মেরামতের কাজে লেগে পড়েছেন। মৎস্যজীবী মহল্লার একটা বিরাট অংশ আবার চলে যান ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে। নিষেধাজ্ঞার সময়কাল পার হওয়ার অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন তাঁরা।
  • Link to this news (প্রতিদিন)