অস্ত্রোপচারের জেরে গভীর ক্ষত! জটিল প্লাস্টিক সার্জারিতে সাফল্য এনআরএসের
প্রতিদিন | ০৩ জুন ২০২৫
অভিরূপ দাস: জটিল এক অস্ত্রোপচার। বগলের পাশে তৈরি হয়েছিল পেল্লায় গর্ত। সেই গর্ত বোজানো হল পেট থেকে চামড়া নিয়ে। বিশাল এ কর্মকাণ্ড হল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। অসম্ভবকে সম্ভব করলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের শল্য চিকিৎসা বিভাগের অধ্যাপক ডা. উৎপল দে, ডা. কনিষ্ক সামন্ত, ডা. অনুপ কুমার।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা জামিল আখতারের (নাম পরিবর্তিত) পেটে টিউমার ধরা পড়েছিল বছর খানেক আগে। সে সময় চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন শরীরে দানা বেঁধেছে রাউন্ড সেল সারকোমা। প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করে রেডিওথেরাপি বিভাগে যেতে বলা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু আর ‘ফলো-আপ’ করায়নি রোগী।
এরপর আচমকাই একদিন বাঁ হাতে ঝিনঝিন। ক্রমশ জোর হারিয়ে যাচ্ছিল। কোনও কিছু ধরতে পারতেন না বাঁ হাত দিয়ে। ফের একদিন হাজির হন নীলরতনের আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্টে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন পেটের ওই ‘রাউন্ড সেল সারকোমা’ এবার বাসা বেঁধেছে বাহুমূলের তলায়।
ডা. উৎপল দে জানিয়েছেন, সে সময় রেডিওথেরাপি করিয়ে নিলে এমনটা হত না। চিকিৎসকরা জামিলের বাঁ হাতের ওই জায়গা পরীক্ষা করে দেখেন, যেখানে টিউমার সেখান দিয়ে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু, ব্লাড ভেসেল বা রক্তনালিকা। রয়েছে অক্সিলারি আর্টারি। যা বাহু, কাঁধে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে। টিউমারটা সেগুলোকে চাপ দিচ্ছে। যে কারণেই হাত ঝিনঝিন। একাধিক হাসপাতালে রোগীকে বলা হয় টিউমারটা কেটে বাদ দিতে হলে হাতটাই বাদ যাবে! কারণ? টিউমারটার আকার।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাড়ে চার কেজি ওজনের টিউমার ১০ সেন্টিমিটার লম্বা, ১২ সেন্টিমিটার চওড়া। হাত বাদ যাবে এহেন আশঙ্কায় রোগী ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে শেষমেশ বাদ দিতে হয়নি হাত। ‘টিম’ তৈরি করে হাত বাঁচিয়ে শরীর থেকে মাংসপিণ্ড বাদ দেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের শল্যচিকিৎসকরা। সেটা করতে গিয়ে বিশাল গর্ত তৈরি হয় বাহুমূলে। ডা. উৎপল দে জানিয়েছেন, টিউমারটা বগলের পিছনটা ধরে নিয়েছিল। আঁকড়ে ছিল চেস্ট ওয়াল। যেহেতু রাউন্ড সেল সারকোমা একধরনের ক্যানসার তাই সমূলে বাদ দিতে হত টিউমারটা।
অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর সিটি স্ক্যান করা হয়। করা হয় এমআরআই। দেখা যায় টিউমারটা হাতের ব্লাড ভেসেল আর স্নায়ুজালিকাগুলোকে চেপে ধরেছে। টিউমারটা বাদ দিতে গিতে বিশাল একটা গর্তের তৈরি হয় বাহুমূলে। সে গর্ত বোজাতে প্রয়োজন ছিল প্লাস্টিক সার্জারির। শেষমেশ পেটের থেকে চামড়া তুলে বগলের গর্ত বুজিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসা পরিভাষায় তা ‘অ্যাডভান্সমেন্ট ফ্ল্যাপ’। অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে পাঠানো হয়েছে রেডিওথেরাপি ডিপার্টমেন্টে।