অর্ণব আইচ: পোষ্যদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দি করে ‘অত্যাচার’! অভিযোগ শহরের দু’টি অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকটি কুকুর ও বিড়ালকে আটকে রেখে অত্যাচার করা হয়েছে। একটি পশুপ্রেমী সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে ২১ টি কুকুর ও বিড়াল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ব্যাপারে সার্ভে পার্ক থানায় ওই সংস্থাটির তরফে এক দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তারই ভিত্তিতে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে।
ওই পশুপ্রেমী সংস্থার কর্ণধার দোলা সরকার জানান, উদ্ধার করা হয়েছে মোট ১৪টি কুকুর ও সাতটি বিড়াল। ওই কুকুরগুলির মধ্যে যেমন দেশি কুকুর রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিভিন্ন ব্রিডের কুকুরও। বিড়ালগুলিকে খাঁচাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। একটি বিরল প্রজাতির পার্সিয়ান বিড়ালের উপরও অত্যাচার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বছর দু’য়েক আগে দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে খাঁচাবন্দি অবস্থায় আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় ৬টি বিড়াল ও একটি কুকুরের। এই দু’টি ঘটনার সঙ্গে সেটার কোনও যোগ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই পশুপ্রেমী সংস্থার কাছে খবর আসে যে, শহরের দু’টি অভিজাত বহুতলের ফ্ল্যাটে আটকে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি কুকুর ও বিড়ালকে। সেইমতো সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে ওই পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা প্রথমে সন্তোষপুরের একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে যান। ফ্ল্যাটের বাইরে দুর্গন্ধ। পুলিশ আধিকারিকরা বুঝতে পারেন যে, ফ্ল্যাট ভাল করে পরিষ্কার রাখা হয়নি। প্রায় ৪৫ মিনিট পর ফ্ল্যাট খোলা হয়। তাঁরা ভিতরে ঢুকে দেখেন, ঘরের ভিতর রয়েছে ৬টি কুকুর। তাদের মধ্যে স্পিটজ, পাগ, পমেরিয়ানের মতো বিভিন্ন ব্রিডের কুকুর রয়েছে। অভিযুক্ত দম্পতি কোনও কুকুরের টিকার কার্ড দেখাতে পারেননি। নোংরা পরিবেশে রাখার কারণে দুর্গন্ধও বের হচ্ছিল তাদের শরীর থেকে। পোষ্যগুলির প্রতি অত্যন্ত অবহেলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও দেখা যায়, গোটা পাঁচেক বিড়াল খাঁচার মধ্যে বন্দি করে রাখা ছিল। অভিযুক্তদের এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পশুপ্রেমীদের মোবাইল কেড়ে ভেঙে ফেলা হয় ও তাঁদের মারধর, হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের হস্তক্ষেপে অবস্থা আয়ত্তে আসে।
এর পর সার্ভে পার্ক এলাকায়ই আরও একটি অভিজাত বহুতলের ফ্ল্যাটে পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে যান পশুপ্রেমীরা। এই ফ্ল্যাটটি বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। সেখানে বিদ্যুৎ বা জলের কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ। সেখানেই খাঁচার ভিতর বন্দি করে রাখা ছিল কয়েকটি দেশি কুকুর ও অন্য ব্রিডের কুকুরও। এ ছাড়াও খাঁচার ভিতর থেকে পার্সিয়াল বিড়ালকেও উদ্ধার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই ১৪টি কুকুর ও সাতটি বিড়াল উদ্ধার করে ওই পশুপ্রেমী সংস্থাটি নিজেদের কাছে রেখেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। দু’টি ফ্ল্যাটে ‘বন্দি’ করে রাখা ওই কুকুর ও বিড়ালগুলিকে জল ও খাবার শুধু দিয়ে আসতেন ওই দম্পতি ও তাঁদের লোকেরা। কিন্তু কোনও পোষ্যেযরই পরিচর্যা করা হত না, অভিযোগ এমনই। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ওই দম্পতি দাবি করেছেন যে, তাঁরা কুকুর ও বিড়াল ভালবাসেন বলে সেগুলিকে তাঁদের কাছে রেখে দেন। যদিও পশুপ্রেমী সংগঠনের অভিযোগ, এভাবে সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই পোষ্যগুলিকে রাখা আসলে তাদের উপর অত্যাচার ছাড়া অন্য কিছুই নয়। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।